রাজনীতি ডেস্ক :
জনগণ জেগে উঠেছে, সরকারের পতন অনিবার্য। রাজপথ দখল করে জনতার সুনামিতে সরকার ভেসে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, সরকারের পতন অনিবার্য। তাই পেশাজীবীসহ সবাইকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনতার যে ঢল নামবে, সমুদ্রে যে ঢেউ উঠবে, সেই ঢেউয়ের যে সুনামি সৃষ্টি হবে তাতে ভয়াবহ এ ফ্যাসিবাদী সরকার ভেসে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা দেশের জন্য। বিএনপির জন্য নয়, তারেক রহমান সাহেবের জন্য নয়, আমার জন্য নয়। এ দেশকে বাঁচানোর জন্য। আজকে আমার জাতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আমার দেশের যে গণতান্ত্রিক আত্মা, সেই আত্মাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাকে বাঁচানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমাদের রাজপথ দখল করে এদের সরাতে হবে। দেশকে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। আজকে জনগণ জেগে উঠেছে। এ সরকারের পতন অনিবার্য।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি আমাদের দাবি খুব সামান্য। দাবিগুলো হলো- দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ মানুষের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এ সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য ও দাবি। আসুন সেই দাবিতে আমরা সবাই এগিয়ে যাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। আপনারা দেখেছেন কীভাবে ব্যাংকগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে, এত লুটপাট সব নিয়ে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও লুট হয়ে যায়। কিছুদিন আগে আমাদের সিঙ্গাপুর দেখাচ্ছিল, এই যে মেট্রো রেল হচ্ছে, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে, মালয়েশিয়া হয়ে যাচ্ছে আর এখন রিজার্ভ নামতে নামতে একেবারে নিচের দিকে নামা শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কাকে বাহাদুরি দেখিয়ে আড়াই‘শ মিলিয়ন ডলার লোন দিল, এখন আপনার আইএমএফের কাছে, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে, এডিবির কাছে আবার সেই লোন চাচ্ছেন। এরা চুরি করে ডাকাতি করে আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে পাচার করেছে। আন্তর্জাতিক একটা প্রতিষ্ঠান বলছে যে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়।
ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, বিদ্যুতের পাওয়ার প্ল্যান্ট ও অন্যান্য চুরি-চামারীতে ৭৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই দিয়ে দিয়েছে। কাদের দিয়েছে? তাদের যারা ব্যবসায়ী, তাদের যারা টাকা-পয়সা দেয়, তাদের যারা কমিশন দেয়, ঘুষ দেয় তাদেরই তারা এ ৭৮ হাজার কোটি দিয়েছে। জ্বালানি তেলে দাম বাড়িয়েছে। এখন আবার বলছে সমন্বয় করব। আরে, আন্তর্জাতিক বাজারে তো তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। আমেরিকাতে আমার ছোট বোন থাকে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাদের ওখানে তেলের দাম কত? সে বলল, আগে ১৪ ডলার ছিল, তা কমে ৩ ডলারে এসেছে। আর আমাদের আগে যে দাম ছিল ৭৮ টাকা তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৫ টাকা। তাহলে সমন্বয় কোথায় করছেন? এখন বিশ্ব বাজারে দাম কমছে আপনারা কমাচ্ছেন না কেন? ওই যে তারা আবার চুরি করবে। এই সরকার ডাকাতি করছে, পুরো টাকা চুরি করছে। বর্গীদের মতো তারা অবস্থান নিয়েছে, তারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মতো অবস্থান নিয়েছে, এদের সঙ্গে কোনো পার্থক নেই।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, শত নাগরিকের আহ্বায়ক ঢাবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আবদুস কুদ্দুস, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাবির শিক্ষক অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম, কৃষিবিদ অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব তৌহিদুল ইসলাম, ইউনানী আয়ুর্বেদীয় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ডা. মির্জা লিটন প্রমুখ।