কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
শুকনো মৌসুমে সবুজ শ্যামল ও সোনালী ধানে পূর্ণ আর বর্ষা মৌসুমে থৈ থৈ পানি এবং শাপলা- শালুকে পূর্ণ গাহাজিয়ার বিল। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী, সালুয়া আর ফরিদপুর তিন ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ বিলটির নাম গাহাজিয়া। তবে বেশিরভাগ ছয়সূতী ইউনিয়নের জায়গা দখল করে নেওয়ায় এ বিলটিকে কেও কেও ছয়সূতীর বড় বিল বলেও ডেকে থাকে। আর ভৌগোলিক অবস্থায় এ গাহাজিয়া বিল কুলিয়ারচরের একমাত্র হাওর হিসেবে পরিগনিত।
উপজেলার বেশিরভাগ ধান ও পাট উৎপাদন হয়ে থাকে এ গাহাজিয়াতে। এ ছাড়া স্থানীয় মৎস্য জীবিদের অন্যতম একটি জীবিকার মাধ্যম গাহাজিয়া বিল।
এ বিলটি বর্ষায় টই টুম্বর হয়ে থাকে পানিতে। বর্ষার আগমনে স্বচ্ছ জল ছারা আর কিছুই চোখে পরেনা তখন। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খনন করা পুকুরের কাছে দন্ডায়মান গাছগুলো জানিয়ে দেয় পানির পরিমাণ। বিলের চারপাশে রয়েছে ছয়সূতী, ধূপাখালী, বড় ছয়সূতী, শ্যামাইকান্দি, কান্দিগ্রাম, দ্বাড়িয়াকান্দি, খিদিরপুর, ফরিদপুর, সালুয়া, ভিটিগাঁও ও মাইজপাড়া গ্রাম। এ গ্রাম গুলোতে কয়েক হাজার লোকের বসবাস।
সম্প্রতি বর্ষার পানিতে বিলের বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে সাদা রঙ্গের শাপলা। কোথাও কোথাও দু’য়েকটা নীল রঙ্গের শাপলাও চোখে পরে। শাপলা- শালুক তুলতে গ্রামের ছেলে- বুড়োরা ভোর হতেই নেমে যায় এ গাহাজিয়ার বিলে। দুপুর হতে না হতেই বিভিন্ন পাত্র আর হাত বোঁঝাই করে শাপলা- সালুক নিয়ে যায় বাড়িতে।
গ্রামাঞ্চলে শাপলা বাজারে বিক্রি না হলেও লোকজন শাপলা তুলে নিয়ে সব্জি হিসেবে রান্না করে থাকে। তবে স্থানীয় বাজার গুলোতে শালুকের ভালো কদর রয়েছে। শালুক হলো শাপলা গাছের গোড়ায় জন্মানো এক ধরনের ছাই রঙ্গের ফল। যা সেদ্ধ করে স্থানীয় মানুষেরা খেয়ে থাকে।
কোষা (ছোট নৌকা) নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসে এ বিলে। মনের আনন্দে বিলের এখান থেকে ওখানে নৌকা চালানো সহ শাপলা সংগ্রহে মেতে ওঠে তারা। বিলে পরিপূর্ণ পানি থাকলে মৌসুমী জেলেরা দিন- রাত মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করে। আর রাতের অন্ধকারে জেলেদের নৌকা থেকে টর্চ লাইটের আলো ছাড়া আর কিছুই চোখে পরেনা তখন।
প্রকৃতির কাছাকাছি এসে আনন্দের ছোঁয়ায় এখানে আসা অনেক পর্যটকদের সকাল গড়িয়ে কখন দুপুর হয়ে যায় সে খেয়াল থাকেনা। পানি কমে যাওয়ায় এ বিলে এখন শাপলা- শালুক সংগ্রহে ধুম পরে গেছে মানুষের।