আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভূমিকম্পের সময় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কম্পন টের পাওয়া যায়। ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে পাকিস্তানেও। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁইছুঁই। আরও অন্তত ৬০০ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে।
বুধবার (২২ জুন) দিনের শুরুতেই শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। যার গভীরতা ছিল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৫১ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএসএসসি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির তীব্রতা উৎপত্তিস্থল থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরেও অনুভূত হয়।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস’র তথ্য মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। ২০০২ সালের পর এটকেই আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে মনে করা হচ্ছে। এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বিশাল।
তালেবানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপমন্ত্রী মৌলভি শরাফউদ্দিন মুসলিমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত ৯৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যাও বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৬০০ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের পাকটিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে অন্তত ২৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা দুইশ’র বেশি। তালেবান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থামন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হক্কানি জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পাকটিকা প্রদেশের উপজাতি নেতা ইয়াকুব মানজুর বলেন, ভূমিকম্পে প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি গ্রামগুলোর ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা জানতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় বাজারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে অনেকেই।
তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জানান, হেলিকপ্টার নিয়ে গিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। তবে এখনও সর্বত্র পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্প আঘাত হানার পর গত কয়েক ঘণ্টায় বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবি ও ভিডিওতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বহু ঘরবাড়ির চিত্র উঠে এসেছে।
ভূমিকম্পে প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি
কাবুল থেকে আফগান সাংবাদিক আলি এম লতিফি জানিয়েছেন, উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দুরে রাজধানীর মানুষও কম্পন অনুভব করেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমিকম্পে শত শত ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
লতিফি আরও জানান, ভূমিকম্পের কারণে ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আটকে পড়া ওইসব অধিবাসীদের উদ্ধারে একাধিক হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সহায়তার জন্য দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ সাংবাদিক আরও জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় একটি চিকিৎসা দল পাঠিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রেসক্যু কমিটি। তবে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কারণ স্থানগুলো প্রাদেশিক রাজধানীগুলো থেকেও অনেক অনেক দূরে। আর রাস্তার অবস্থাও তত ভালো নয়। ফলে ওই সব জায়গায় পৌঁছাতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হেদায়েতুল্লাহ পাকতিন বলেছেন, পাকটিকা অঞ্চলের বেশিরভাগ ঘরবাড়িই পুরনো ধাচের। সাধারণত মাটি, পাথর ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়। পাকা ঘর খুবই কম।
পাকতিন আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে, আফগানিস্তান যখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে, ঠিক তখন ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানলো। গত বছরের আগস্টে রাজধানী কাবুল দখলের মধ্যদিয়ে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তালেবান। এরপর আফগানিস্তানের নাগরিকদের দু:খ-দুর্দশা আরও বেড়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণ করতে পারছে না বেশিরভাগ মানুষ।
পাকিস্তান ও ইরানেও ভূমিকম্পের শক্তিশালী আঘাত
আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান ও ইরানেও প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে এ ভূমিকম্প। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ইসলামাবাদেও হাল্কা কম্পন হয়েছে। তবে লাহোর, মুলতান, কোয়েটায় ভূমিকম্পের তীব্রতা বেশি ছিল। কম্পন অনুভূত হওয়ার পর সাধারণ মানুষরাস্তায় নেমে পড়েন। তবে পাকিস্তান থেকে এখনো পর্যন্তক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি।