হোম অন্যান্যসারাদেশ ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাংবাদিক ঐক্যের স্মরণ, ভক্তিশ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আবারও সিক্ত হলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল মোতালেব

সংকল্প ডেস্ক :

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সাতক্ষীরার প্রখ্যাত সাংবাদিক, মানবদরদী সমাজসেবক, দূর্যোগ কবলিত মানুষের নিকট বন্ধু আব্দুল মোতালেব। তার ২০তম প্রয়াণ দিবসে তিনি স্মরিত হলেন সাতক্ষীরার নত মস্তক সাংবাদিকদের আলোচনায়। জীবনব্যাপী তার কর্মযজ্ঞের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বক্তারা তাকে ক্ষণজন্মা বটবৃক্ষের সাথে তুলনা করে বলেন, তিনি ছিলেন এক শীতল ছায়া দানকারী মহীরূহ।

সকলে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে তার স্মরণসভার আলোচনার সূচনাতে বক্তারা বলেন, তার তুলনা তিনি নিজেই। এমন সমাজ সংগঠক কারিগর আর কোথাও মিলবে কিনা বলা খুবই কঠিন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা এলজিইডি মিলনায়তনে সাংবাদিক ঐক্য আয়োজিত এই স্মরণসভায় আলোচকরা তার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এসময় তার মৃত্যুর কথা চিন্তা করে অনেকে অশ্রসজল হয়ে ওঠেন। আব্দুল মোতালেবের মত এমন দরদী মানুষ আর জন্মায়নি জানিয়ে তারা বলেন, তার দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়েই রাজনৈতিক নেতারা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বেকার মানুষ চাকুরি পেয়েছেন। তার হাতের স্পর্শে গড়ে উঠেছে অগণিত সংখ্যক স্কুলকলেজ ও মাদ্রাসা। তিনি সাতক্ষীরার বহু সাংবাদিকের হাতেখড়ি দিয়েছেন। তাদের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে এইসব সাংবাদিককে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমাজে যার অবদানকে কোনভাবেই খাটো করে দেখবার সুযোগ নেই মন্তব্য করে সাংবাদিক বক্তারা বলেছেন, তিনি প্রত্যন্ত গ্রামে স্কুল বানিয়েছেন। সেখানে শিক্ষিত বেকারদের চাকুরি দিয়ে সমাজকে ঋণী করেছেন। সেইসব চাকুরিজীবিরা এখন হয় অবসরে গেছেন আর না হয় এখনও কর্মরত রয়েছেন।

সাংবাদিক ঐক্য’র আহবায়ক, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর এনটিভির প্রতিনিধি সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব দেশ টিভি, দেশ রূপান্তর ও বিডি নিউজের প্রতিনিধি শরীফুল্লাহ্ কায়সার সুমনের সঞ্চালনায় স্মরণসভার বক্তব্যে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, আমরা আব্দুল মোতালেবের দেখানো আদর্শ ও পথ ধরে এগিয়ে চলেছি। তার সঙ্গে আমাদের কোন তুলনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন সমাজ নির্মাতা, জীবনঘনিষ্ঠ মানবদরদী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষানুরাগী। আমরা তার প্রতি আবারও শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সকল কর্মযজ্ঞকে সবার সামনে তুলে ধরতে চাই।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক পত্রদূতের উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, মোতালেব ভাইয়ের সাথে আমাদের মধুর সম্পর্ক ছিলো। কোন বিশেষ সময়ে সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিলেও তা ছিল ক্ষণিকের। অল্পক্ষণ পর তিনি পেছনের সবকিছু ভুলে গিয়ে আবারও আমাদের বুকে টেনে নিতেন। তার সভাপতিত্বে পরিচালিত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দীর্ঘ সময়ের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার বিস্তর অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মধুর। তার সাথে থাকাটাই ছিল একটি বড় ধরনের প্রাপ্তি।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম বলেন, তার হাত ধরে বহু সাংবাদিক উঠে দাঁড়িয়েছেন। তার সঙ্গে থেকে আমরা প্রেসক্লাব পরিচালনা করেছি এবং তার অনুকরণীয় আদর্শ আমাদের মুগ্ধ করতো। তিনি অজপাড়াগাঁয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরী করে সমাজকে আলোকিত করেছেন। দূর্যোগের সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার মত এমন কোন ব্যক্তি আমরা এখন আর পাই না। আর এ কারনেই আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আছি।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও চ্যানেল আই এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন মানুষের কত গুণ থাকতে পারে। তিনি ছিলেন সব গুণের অধিকারী। আমরা তার অধীনে সাপ্তাহিক ও দৈনিক কাফেলায় সংযুক্ত থেকে তাকে নিকট থেকে চিনতে পেরেছি একজন উদার মানুষ হিসেবে। নিরহংকার, অসাম্প্রদায়িক এমন একজন গুণী ব্যক্তিকে আমরা অকালেই হারিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে তার সময়ে গ্রুপিং থাকলেও তা কখনও শত্রুতার পর্যায়ে যায়নি। অথচ এখন সেই বিষয়টি সবার সামনে চলে এসেছে। তিনি সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করেছেন। নারীশিক্ষায় অভাবনীয় অবদান রেখেছেন। স্কাউট আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানুষকে মানবতার সেবক হিসাবে গড়ে তুলবার প্রয়াস পেয়েছেন।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আরটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, তিনি কোন দল করতেন না। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের অনুসারী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তার আহমাদিয়া প্রেসের আড্ডাখানায় যারা আমরা সবসময় বসতাম তারা সবাই বলতে পারি, তিনি মানুষকে হাসিতে খুশিতে রাখতে ভালোবাসতেন। আমরা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে যাবো।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াজেদ কচি বলেন, আমরা সন্ধ্যায় আসতাম আর গভীর রাতে বাড়ি ফিরতাম। শ্রদ্ধেয় মোতালেব মামা আমাদের সাংবাদিকতা শিখিয়েছেন। তিনি এই পথে আমাদের আসতে উৎসাহিত করেছেন। তাকে বাদ দিয়ে সাতক্ষীরার কোন সাংবাদিক প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেননি।

বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান বলেন, তিনি সকল বাঁধাবিঘ্নকে তুচ্ছজ্ঞান করে সাংবাদিকদের দাঁড় করানোর কাজে অনবদ্য ভ‚মিকা নিয়েছেন। আহমাদিয়া প্রেস আড্ডাখানায় চা, বাদাম, মুড়িচানাচুর খাননি এমন কোন ব্যক্তিকে হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না। তার এই আড্ডাখানায় বসতে মানুষকে লাইন দিতে হতো। তিনি তার ৩৭৫ নম্বরের টেলিফোন উঁচু করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেন। আশ্বস্ত করতেন যারা সাহায্যপ্রার্থী তাদের। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক দিনকালের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আব্দুল বারী বলেন, মোতালেব ভাই ছিলেন আমাদের মাথার মুকুট। তিনি মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকতে দেননি। সব মানুষকে তার বিশেষ ক্ষমতাবলে এক কাতারে নিয়ে আসতে কাজ করেছেন। সমাজের সকল স্তরে ছিল তার পদচারণা। সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন একজন বিজয়ী মানুষ। তার অকালমৃত্যুতে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরন হবার নয়।

সাংবাদিক ঐক্য’র সদস্য সচিব শরীফুল্লাহ্ কায়সার সুমন বলেন, তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক গুণী মানুষ। যেকোন নির্বাচনে জয়ী হতে হলে মোতালেব সাহেবের শরণাপন্ন হতে হতো। গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষও এমনকি উপজেলা ও সংসদীয় পর্যায়ের রাজনীতিকরাও তার কাছে এসে ধর্না দিতেন।

স্মরণসভার আলোচনায় সভাপতি সুভাষ চৌধুরী জুন মাসে আব্দুল মোতালেব, হুমায়ুন কবির বালু, সম আলাউদ্দিন, মুফতি আব্দুর রহিম কচির মতো বিদগ্ধ সাংবাদিকদের আমরা হারিয়েছি উল্লেখ করে বলেন, এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে যেসব সাংবাদিক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন এড. হাসান আওরঙ্গী, শেখ আব্দুস সাত্তার, শেখ আব্দুস সোবহান, মহসীন হোসেন বাবলু প্রমুখ। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, মোতালেব ভাইয়ের পথ আমাদেরই পথ। তার আদর্শ আমাদেরই আদর্শ। তিনি শিখিয়েছেন মানবদরদ। তিনি শিখিয়েছেন সাংবাদিকতা। তিনি শিখিয়েছেন নারীশিক্ষা। তিনি বেকার মানুষকে তুলে এনে চাকুরি দিয়েছেন। এমন মহানুভব মানুষের আবির্ভাব আর ঘটবে কিনা বলা কঠিন। আমি সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে তার প্রতি নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, তার কর্মযজ্ঞের ওপর একটি অনুসন্ধানী গবেষণা চালিয়ে তাকে আমাদের মাঝে স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে হবে।

স্মরণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সময়ের আলোর কাজী শহিদুল হক রাজু, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম চক্রবর্তী, দৈনিক প্রবাহের এড. খায়রুল বদিউজ্জামান, ইনডিপেন্টডেন্ট টিভি ও আজকের পত্রিকার আবুল কাশেম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণের কাজী শওকত হোসেন ময়না, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী, সাপ্তাহিক মুক্ত স্বাধীন সম্পাদক আবুল কালাম, রেডিও নলতার শেখ ফারুক, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের আমিনা বিলকিস ময়না, খবরপত্রের রবিউল ইসলাম, যমুনা টিভির আহসানুর রহমান রাজিব, বণিক বার্তার গোলাম সরোয়ার, ভোরের পাতার ডাঃ মহিদার রহমান, শ্রমিক নেতা শেখ রবিউল ইসলাম, পাটকেলঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

 

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন