হোম অন্যান্যসারাদেশ খুলনার পাইকগাছায় ঘুর্নিঝড় আম্ফানের তান্ডবে শিশুর মৃত্যু, আহত-৯৩

খুলনার পাইকগাছায় ঘুর্নিঝড় আম্ফানের তান্ডবে শিশুর মৃত্যু, আহত-৯৩

কর্তৃক
০ মন্তব্য 133 ভিউজ

খুলনা অফিস :
খুলনায় ঘুর্নিঝড় আম্ফানের তান্ডবে সুন্দরবন ঘেষা উপকূলীয় কয়রা-পাইকগাছা উপজেলা লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। ঝড়ের সময় পাইকগাছায় নানার বাড়ীতে বেড়াতে এসে ঝড়ে দেয়াল চাপায় মিরাজ(৫) নামে এক শিশুর মৃত্যুসহ ৯৩ ব্যক্তি আহত হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে ও অ-স্বাভাবিক জোয়ারের চাপে একাধিক স্থানে পানিউন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে এলাকার শত-শত মৎস্য ঘের,হাজারো বিঘার কৃষি ক্ষেত তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এলাকাবাসীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার ঘুর্নিঝড় আম্ফানের তান্ডবে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার চাঁদখালী ইউপির কৃষ্ণনগর গ্রামে মামার বাড়ীতে মিরাজ নামে এক শিশু ইটের দেওয়াল চাপায় নিহত হয়। এ সময় তার মা শাবনুর বেগমও আহত হয়। নিহত শিশু যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বিশোরীপুর গ্রামের জহুরুল শেখের ছেলে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙ্গে আরও ৯২জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ঘুর্নি ঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট জলের উচ্চতা বুদ্ধি পেলে উপজেলার অনেক স্থানের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদার বেঁড়ি ছাপিয়ে পোল্ডারে পানি ঢুকেছে এবং অনেক স্থানে ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাতে ২৩ নং পোল্ডারের লস্করের খেয়াঘাট সংলগ্ন স্থানে ১৫ ফুট ও কড়ুলিয়ার আনিছ খার ঘের সংলগ্ন স্থানে ৪০ফুট বেঁড়িবাধ ভেঙে পোল্ডারে পানি প্রবেশ করলে বহু চিংড়ী ঘের তলিয়ে গেছে।
এদিকে কালীনগরে ২ ফুটের উর্ধে ঝুকিপূর্ন বেঁড়িবাধ ভেঙে গোটা এলাকা লবন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুপদ রায় জানান,লবন পানিতে উঠতি ফসল ২শ একর তরমুজ ক্ষেত, বহু ঘরবাড়ি, পুকুর ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যন গাজী মোহাম্মদ আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া গাদইপুরের কচুবুনিয়া,নিমাইখালী, রাড়ুলীর কাঠিপাড়া,গড়ইখালীর বাজার, শান্তা গংরক্ষি,দেলুটির গেবুবুনিয়া, মধুখালী,পারমধুখালী, কপিলমুনির শ্রীফলতলা, লতার ইউপির কাঠামারী,লতা,হাড়িয়া, পানা,হালদার চকে ওয়াপদার নিচু বাঁধ ছাপিয়ে পোল্ডারে পানি প্রবেশ করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
এদিকে ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে কয়রা উপজেলার হাজারো ঘরবাড়ী, ফসলের ক্ষেত সহ বিভিন্ন স্থানে বেঁড়িবাধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক স্নেহেন্দু বিকাশ কুদ্দুস সানা, বাচ্চু সানা,স্বপন গাইন সহ স্থানীয় শাতাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিকল্প বাঁধ দেওয়ায় খেয়াঘাটের ভাঙন রক্ষা পায়। একই সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জ্মান তিহিন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জেল ও গ্রামবাসির প্রচেষ্টায় ভাঙন কবলিত বাঁধ মেরামত করা হয়েছে।
জেলা ত্রান কর্মকর্তা আজিজুল হক জোর্দ্দার জানান, ঘুর্নিঝড় আম্ফানে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে খুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ।এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়রা উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কয়রায় একলাখ ৪৮হাজার, পাইকগাছায় ৩৫হাজার, দাকোপে প্রায় এক লাখ, বটিয়াঘাটায় ৫হাজার এবং অণ্যান্য উপজেলায়ও বেশকিছু মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছে। আর জেলায় ৮২ হাজার ৫৬০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে কয়রায় ৩৭হাজার, পাইকগাছায় ৩৫,হাজার, দাকোপে একহাজার, বটিয়াঘাটায় ৩হাজার ৬৭১, ডুমুরিয়ায় ২হাজার ২৫০, দিঘলিয়ায় ৪০০, ফুলতলায় হাজার ৪৮০, রূপসায় ২০০ এবং তেরখাদায় ৩৭০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে।
এদিকে, ঝড়ের পর বৃহষ্পতিবার খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রার) সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু নির্বাচনী এলাকার একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ স্থান পরিদর্শন করে দুর্যোগ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ক্সতিগ্রস্থদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন