আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিজয় দিবসে ভাষণের প্রাক্কালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে শয়তান ফিরে এসেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মরণে এক ভাষণে নাৎসি জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার আক্রমণের তুলনা করে জেলেনস্কি এ মন্তব্য করেন। খবর আলজাজিরার।
এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক দশক পরে, ইউক্রেনে অন্ধকার ফিরে এসেছে, এবং এটি আবার কালো ও সাদা হয়ে উঠেছে।’
ওই ভাষণে তিনি বলেন, শয়তান আবার ফিরে এসেছে। ভিন্ন রূপে, ভিন্ন স্লোগানে, কিন্তু একই উদ্দেশ্যে। তিনি আরও বলেন, কোনো শয়তান দায়িত্ব এড়াতে পারে না, বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকতে পারে না।
নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে বার্লিনের একটি বাঙ্কারে কাটিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি যুদ্ধের শেষে আত্মহত্যা করেন।
জেলেনস্কি রাশিয়াকে ‘নাৎসিবাদের রক্তাক্ত পুনর্গঠন’ বাস্তবায়নের জন্য অভিযুক্ত করেন। বলেন, মস্কোর সেনাবাহিনী নাৎসিদের ‘নৃশংসতার’ প্রতিরূপ কাজ করছে।
এদিকে ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলীয় বিলোহোরিভকা গ্রামের একটি স্কুলে রুশ সেনাদের বোমা হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ হামলায় আরও ৬০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে রোববার (৮ মে) জানিয়েছেন লুহানস্কের গভর্নর সেরহি গাইদাই।
গভর্নর জানান, রুশ বাহিনী শনিবার (৭ মে) বিকেলে ওই স্কুলে একটি বোমা ফেলে, যেখানে স্থানীয় প্রায় ৯০ জন বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ হামলার পরপরই স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়।
আরেক খবরে জানা যায়, ইউক্রেনের খারকিভে রুশ বাহিনীর দখল করা অঞ্চলে হামলা চালিয়ে বেশকিছু এলাকা শত্রুমুক্ত করার দাবি করেছে জেলেনস্কি বাহিনী। এর মধ্যেই বন্দরনগরী ওডেসায় ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসির এক খবরে জানা যায়, ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর আগে রুশ সেনারা যেখানে ছিল, সেখানেই তাদের ফিরে যেতে হবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনো শান্তিচুক্তি তার ওপরই নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়া এখন ইউক্রেনের মারিওপোল শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য লড়াই করছে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই শহরটির বিশাল ইস্পাত কারখানা আজভস্তাল স্টিল ওয়ার্কসে ইউক্রেনীয় সেনা ও বেসামরিক মানুষ আটকা পড়েছিল। সেখানে আটকে থাকা শেষ বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক শনিবার (৭ মে) জানান, মারিওপোলের বিধ্বস্তপ্রায় আজভস্তাল ইষ্পাত কারখানা থেকে সব নারী, শিশু ও প্রবীণকে উদ্ধার করা হয়েছে।
৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবস। দিবসটি উদ্যাপনে কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ৯ মে দিবসটি পালন করবে রাশিয়া। ১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। মস্কোর রেড স্কয়ারজুড়ে সেনাদের কুচকাওয়াজ এবং সামরিক অস্ত্রাগার ও আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করবে তারা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ পর্যন্ত টানা ৭৪ দিনের মতো চলছে অভিযান। সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ রুশ বাহিনীকে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। যদিও এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে মস্কো।
