আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বরিস জনসনকে সরিয়ে দিলে যুক্তরাজ্য অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের চেয়ারম্যান অলিভার ডোডেন এমনটিই মনে করছেন।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউন চলার মধ্যে সরকারি অফিসে পার্টি করার দায়ে পার্লামেন্ট সদস্যদের ব্যাপক চাপে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে আহ্বান জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। এতে ক্ষমতাসীন টরি দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যরাও যোগ দিয়েছেন।
অলিভার ডোডেন বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের নেতার পরিবর্তনে কোনো জাতীয় স্বার্থ নেই। অর্থাৎ ক্ষমতা থেকে বরিসকে এখন সরিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। বিবিসির সানডে মর্নিং প্রোগ্রামে আলাপকালে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহে এক তুলনাহীন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে যুক্তরাজ্য। তাতে মনোযোগ দেয়াই প্রধানমন্ত্রীর জন্য সঠিক কাজ হবে।
লেবার নেতা কিয়ার স্টামার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব ভণ্ডুল হয়েছে। কথিত পার্টিগেট কেলেঙ্কারির কারণে জীবন যাপনের খরচ বেড়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে পার্লামেন্টে কোনো আলোচনা হচ্ছে না।
আর এসএনপির ওয়েস্টমিনিস্টার নেতা ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, করোনা আইন লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গোনার পর বরিস জনসনের কোনো নৈতিক কর্তৃত্ব নেই।
গত সপ্তাহে স্ত্রীসহ বরিস জনসন ও তার অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানা করে পুলিশ। তারা ২০২০ সালের জুনে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে একটি পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। ডাউনিং স্ট্রিট ও হোয়াইট হলে আইনভঙ্গ করে পার্টি করার তদন্ত শুরু হওয়ার পর লন্ডন মহানগর পুলিশ ৫০টি জরিমানা করেছে। তার একটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন স্বয়ং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও।
দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে আইনভঙ্গের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বারবার ক্ষমা চেয়েছেন বরিস জনসন। তিনি বলেন, পার্টিতে অংশ নেওয়ার সময় তার কাছে মনে হয়নি, তিনি কোনো আইন লঙ্ঘন করেছেন।
মহানগর পুলিশের নেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নিজের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তবে তার এই দুঃখপ্রকাশকে ‘রসিকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। এছাড়া এসএনপি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরাও তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে।
কনজারভেটিভ পার্টির কয়েজন সিনিয়র সদস্য বলেন, বরিস জনসনের এখন পদত্যাগের সময় হয়েছে। কিন্তু তাকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন দলটির প্রধান ডোডেন। তিনি বলেন, পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে লোকজন কতটা আহতবোধ করছে, তা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি অকুণ্ঠচিত্তে ক্ষমা চেয়েছেন।
অলিভার ডোডেন বলেন, আমি মনে করি, তার ভালো কাজগুলোরও মূল্যায়ন হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সঠিকভাবে টিকা কার্যক্রম ও ব্রেক্সিট সম্পন্ন করেছেন। আর ইউক্রেন ইস্যুতে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
টরি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এখন যে প্রতিকূলতার মুখোমুখী—তা হোক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জ্বালানি নিরাপত্তা—এই চ্যালেঞ্জ অতুলনীয় অস্বাভাবিক। কাজেই এখন প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন আসলে দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে। আর তা জাতীয় স্বার্থের জন্য সুখকর হবে না।