হোম ফিচার মণিরামপুরে ডোবায় পুঁতে রাখা কলেজছাত্রের বস্তাবন্দী লাশ অপহরণের ৩দিন পর উদ্ধার

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

মণিরামপুরে বস্তাবন্দী অবস্থায় পুঁতে রাখা এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে উপজেলার মদনপুর মাঠের নিমতলা নামকস্থানের একটি ডোবা খুঁচে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
ওই ছাত্রের নাম ইকরামুল হোসেন (১৮)। তিনি একই উপজেলার মশ্মিমনগরের ভরতপুর গ্রামের প্রবাসী মফিজুর রহমানের ছেলে। ইকরামুল রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

এ ঘটনায় বুধবার (৩০ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে পুলিশ ভরতপুর গ্রাম থেকে তিনজনকে আটক করে। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে ইকরামুলের মরদেহ উদ্ধার হয়। আটক তিনজন ইকরামুলের প্রতিবেশী।

এর আগে সোমবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় ওয়াজ মাহফিল শোনার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ইকরামুল। তার তিনদিন পর ওই ছাত্রের বস্তাবন্দী পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার হলো।

আটক তিনজন হলেন, ভরতপুর গ্রামের হোসেন আলী মোড়লের দুই ছেলে আমিনুর রহমান ও কামরুল হাসান এবং আব্দুল কাদেরের ছেলে মেহেদী হাসান।
ইকরামুলের স্বজনরা এ তিনজনকে আটকের কথা জানালেও পুলিশ আমিনুরকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আমিনুর উচ্চ শিক্ষিত বেকার। তার ভাই কামরুল কুয়েত প্রবাসী। সম্প্রতি তিনি বাড়িতে এসেছেন। আর মেহেদী প্যারামেডিকেলের ছাত্র।

নিহতের স্বজনদের দাবি, কেরাম খেলা নিয়ে আমিনুরের সাথে দ্বন্দ্বে আটক তিনজন মিলে ইকরামুলকে খুন করেছে।

তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, প্রবাসীদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকাণ্ড। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে উপস্থিত কিছু জানা যায়নি।

ইকরামুলের চাচা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, মশ্মিমনগর এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার উদ্দেশে গত সোমবার সন্ধ্যার আগে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন ইকরামুল। এরপর রাত নয়টা থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতে আমরা থানায় আসি। পুলিশের পরামর্শে বুধবার সকালে যশোরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে যাই। তারা মণিরামপুর থানায় জিডি করতে বলেন। থানায় জিডি করার পর দুপুরে আবার যশোরে যাই। এরপর রাত একটার দিকে পুলিশ বাড়ি থেকে প্রথমে আমিনুরকে আটক করে। পরে কামরুল ও মেহেদীকে আটক করে তিনজনকে নিয়ে যায়।

আসাদুজ্জামান বলেন, ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার আগে এলাকার একটি সাঁকোর ওপরে আমার সাথে ইকরামুলের দেখা হয়। সেখানে থেকে মেহেদীর মোটরসাইকেলে করে মাহফিলে যাওয়ার কথা ছিলো ইকরামুলের।

তিনি বলেন, এক বছর আগে কেরাম খেলা নিয়ে আমিনুরের সাথে গণ্ডগোল হয় ইকরামুলের। সে সূত্র ধরে আমিনুর, কামরুল ও মেহেদী সোমবার রাতে তুলে নিয়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে পুঁতে রাখে।

আসাদুজ্জামান বলের, ইকরামুলকে পিটিয়ে ও গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে তারা খুন করেছে। তার (ইকরামুলের) মোবাইলের সিমকার্ড খুলে তাতে নিজের সিমকার্ড ঢোকান আমিনুর। সে সূত্র ধরে আমিনুরকে আটক করে পিবিআই।

ইকরামুলের মা রেশমা খাতুন বলেন, পুলিশ আমিনুর, কামরুল আর মেহেদীরে ধরেছে। ওরা আমার ছেলের খুন করেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই।

যশোরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক হিরন্ময় সরকার ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন আলোকে বলেন, নিখোঁজ কলেজ ছাত্র ইকরামুলের মা জিডি করার পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমিনুরকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইকরামুলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

হিরন্ময় সরকার বলেন, কি কারণে হত্যাকাণ্ড তা পরে জানাতে পারবো।

মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মাহবুবুর রহমান লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার (৩০ মার্চ) থানায় জিডি হয়েছে। আটকের বিষয়টি পিবিআই বলতে পারবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন