স্বাস্থ্য ডেস্ক :
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জ্বরের সিরাপ (নাপা) খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (১৩ মার্চ) রাজধানীতে এ কথা বলেন তিনি।
গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি পরিদর্শন করে ওই ওষুধ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। সেই সঙ্গে পরীক্ষার প্রতিবেদন ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর জন্যও বলা হয়েছে। শনিবার (১২ মার্চ) ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক জরুরি অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে একই দিন এই দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকালে এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঘটনার দুদিনের মাথায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের পক্ষ থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস-সালেহীন, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক সোসাইন। এ কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আকতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. মাজহারুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রানা নুরুস শামস। এ কমিটিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূপুর সাহাকে প্রধান করে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মো. হাবিবুল ইসলাম এবং আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটাইজ ইন্সপেক্টর মো. শাহেদ মিয়া। তাদের সরেজমিন ঘটনা তদন্ত করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুরে ইটভাটা শ্রমিক সুজন খানের দুই সন্তান ইয়াসিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে সুজনের স্ত্রী লিমা বেগম বাড়ির পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ওষুধের দোকান থেকে নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। ওই সিরাপ খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর থেকেই দুই শিশু বমি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসা জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। বাড়িতে নিয়ে আসার পথে প্রথমে বড় ভাই ইয়াসিন খানের মৃত্যু হয় এবং পরে বাড়িতে ফেরার পর ছোট ভাই মোরসালিন খানের মৃত্যু হয়।