কি ঘটেছিল সে রাতে
নিজস্ব প্রতিনিধি
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় সাতক্ষীরা আদালত চত্ত¡রের কাছ থেকে জোর করে তুলে নিয়ে সাতক্ষীরার বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে টানা ৭ ঘন্টা মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি করেছে র্যাব-৬ এর কোম্পানি পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কোন যৌক্তিক কারন ছাড়াই তাকে তারা হেনস্থা করে মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। আর এই ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে নিন্দা ও প্রতিবাদের উঠেছে।
হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের বর্ননা দিতে গিয়ে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার বলেন, দুই তিন দিন আগের একটি মারামারির ঘটনায় আহত হওয়া তার ভগ্নিপতি নজরুল ইসলামকে নিয়ে মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরার আদালত চত্ত¡র ত্যাগ করতেই র্যাবের মুখোমুখি হন।
এসময় র্যাবের সাতক্ষীরা কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার ইশতিয়াক হোসাইনের নেতৃত্বে একদল সদস্য জবরদস্তি করে নজরুল ইসলামকে তাদের গাড়িতে তুলে নেয় এবং গোলাম সরোয়ারের মোটরসাইকেলে র্যাবের আরেক সদস্য শহরের তালতলাস্থ র্যাব ক্যাম্পে পৌছান। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় এ ঘটনার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়। এসময় তার মোবাইল এবং গাড়ির চাবিও কেড়ে নেয় তারা।
মানসিক নির্যাতন শেষে তাকে একটি মুচলেকা পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে রাত ১১টায় ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এ ঘটনা নিয়ে কাউকে কিছু না বলার যেন চাপ দেওয়া হয় তার ওপর এবং শুক্রবার সকাল ৭টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট মারামারির ঘটনায় জড়িত তার ভাগ্নে ফজর আলীকে হাজির করার কথা জানিয়ে দেয়। গোলাম সরোয়ার অভিযোগ করে বলেন, রাত ১১টায় তাকে ছেড়ে দিলেও শুক্রবার সকালে ফের র্যাব তার সাথে হুমকির স্বরে বলে তাকে ১০ মিনিটের মধ্যে আবার ক্যাম্পে হাজির হতে হবে এবং তার ভাগ্নে ফজর আলীকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
তিনি জানান, ‘আমি একজন সংবাদকর্মী একথা বারবার বলা সত্তে¡ও তারা আমার কথায় কর্নপাত করেননি। এমনকি আমার পত্রিকার আইডি কার্ড যথাযথ কিনা তা নিয়েও নানা প্রশ্ন তোলেন’। বনিক বার্তা পত্রিকা কোথা থেকে বের হয় এমন প্রশ্নও করেন র্যাব কর্মকর্তারা। তারা গোলাম সরোয়ারের কোন কথাকেই গ্রহন না করে মানসিক নির্যাতন বাড়াতে থাকে। একই সময় ভিন্ন গোপন কক্ষে নিয়ে তার আহত ভগ্নিপতি নজরুল ইসলামের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে।
এ ঘটনা সকালে জানাজানি হবার পর সাংবাদিকরা খোজ নিয়ে জানতে পারেন তিন দিন আগে সাতক্ষীরা আদালত চত্ত¡রের ক্যান্টিনে নজরুল ইসলামের সাথে অপর একটি গ্রæপের ব্যবসা নিয়ে মারামারির যে ঘটনা ঘটে তাতে দুই পক্ষই কমবেশী আহত হলেও কেউ আইনের আশ্রয় নেননি। ফলে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত কোন মামলা না হওয়া সত্তে¡ও র্যাব সদস্যরা অতি উৎসাহী হয়ে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার ও তার বোনজামাই নজরুল ইসলামকে হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করে। সাতক্ষীরা থানায় খোজ নিয়ে আরও জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল ৩টার পর যে মামলাটি হয়েছে সে মামলায় গোলাম সরোয়ার কোন আসামীও নন।
এরপরও র্যাব কেন এত বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটালো তা নিয়ে সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মামলার আগে কেন মারামারির মত সাধারন ঘটনায় একজন লোককে গ্রেফতার এবং তাকে বহনকারী সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে জোর জবরদস্তি করে গাড়িতে তুলে নিয়ে টানা ৭ ঘন্টা মানসিক হয়রানি ও নির্যাতন করা হলো তা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আন্দোলনের কর্মসূচী দেওয়া হবে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপীর সভাপতিত্বে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচীর কথা জানানো হয়।