নিজস্ব প্রতিবেদক :
খুলনায় ও.এম.এস কার্যক্রমে (খোলা বাজারে চাল-আটা বিক্রয়) অনিয়মের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ ঘটনায় ডিলার সাঈয়েদুজ্জামান মোল্লাসহ ৫টি লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছে। একই সাথে ডিলার এইচ.এম আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের দায়ে মামলা করতে দূর্ণীতি দমন কমিশনে(দুদক) সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহষ্পতিবার খুলনার জেলা প্রশাসন এই নির্দেশা দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র পাঠিয়েছে। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সুত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়,ওএমএস কার্যক্রমে চাল-আটা বিক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের উদ্যেগে গত ১৬ এপ্রিল ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ ওঠে ওএমএস ডিলার সাঈদুজ্জামান মোল্লা ওরফে সম্্রাট সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে নামে-বেনামে একাধিক ডিলারশীপ নেয়া এবং চাল-আটা বিক্রয়ে অনিয়ম করে আসছে।
এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কয়েক দফায় ব্যাপক অনুসন্ধান,সরেজমিন পরিদর্শনসহ অভিযুক্ত ডিলারসহ স্বাক্ষিদের স্বাক্ষ রেকর্ড করে। তদন্তে সম্্রাটের নামে-বেনামে ও নিয়ন্ত্রনে থাকা ৫টি লাইসেন্স সম্পর্কে সত্যতা বিষয়ে ব্যাপক তথ্য পাওয়া যায়। যদিও এসব লাইসেন্সের স্বাধিকারী হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের নাম রয়েছে।
লাইসেন্সগুলির মধ্যে নির্মান এন্টারপ্রাইজের মালিকানায় রয়েছেন সাংবাদিক এইচ এম আলাউদ্দিন,সুলতানা ইন্টারপ্রাইজের সাঈদুজ্জামান মোল্লা ওরফে সম্্রাট,জোহরা এন্টারপ্রাইজের হুমায়ুন কবির,এসএম এন্টারপ্রাইজের ওহিদুজ্জামান এবং রুবেল এন্টারপ্রাইজের নিশাত পারভিন।
সরেজমিনে এসব লাইসেন্সের অনুকুলে নিজস্ব কোন দোকান ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। গত ২/১ বছরে এসব লাইসেন্সের অনুকুলে কোন আটা বা চাল দেয়া হয়নি মর্মে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণ স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। যেহেতু এই ৫টি ওএমএস লাইসেন্সের নিজস্ব দোকান ঘর নেই এবং স্বত্বাধিকারীর গড়মিল এবং ওএমএস ডিলারশীপ নেওয়ার বেশীরভাগ শর্ত মানা হয়নি।
সেহেতু এই ডিলারগন নিয়মিত খাদ্য পণ্য তুললেও খোলা বাজারের পরিবর্তে কালো বাজারে বিক্রি করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে তদন্ত টিমের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। যে কারণে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত পূর্বক অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, ওএমএস সংক্রান্ত যে কোন সিদ্ধান্তে ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির জানাবেন। জেলা প্রশাসকের সুপারিশকৃত চিঠি ওই কমিটিকে দেয়া হবে। সেখান থেকে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওএমএস ডিলারদের একটি সুত্র জানায়,ওএমএস ডিলার সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাট খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে তিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে ওএমএস-এর একাধিক ডিলারশীপ নিয়েছেন। এসব ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রসহ সত্বাধিকারীর কোন অস্তিত্ব নেই। নীতিমাল অনুসারে সরকারি মূল্যে চাল-আটা ক্রয় করে খোলা বাজারে বিক্রয় করতে হবে।
যেহেতু ডিলার বা লাইসেন্সের অনুকুলে বিক্রয় কেন্দ্র নেই। সেহেতু এই পণ্য কালো বাজারে বিক্রয় হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব কাজ তিনি সাংবাদিকতার পরিচয়ের পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে (তদারকি) উৎকোচের মাধ্যমে ম্যানেজ করে অনিয়ম চালিয়ে আসছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সব কিছু বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে দরিদ্র মানুষদের মাঝে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ কর্মসূচি চালু হয়। এছাড়া ১৮ টাকা কেজি ধরে আটা বিক্রি কার্যক্রম সারা বছর ধরে চলমান রয়েছে।
এ জন্য খুলনায় ৮৯ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাটও নিজ নামে ডিলারশীপ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেন। যার প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ১৬ এপ্রিল ৫ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
কমিটির সদস্যরা হলেন, আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইউসুফ আলী, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এনএম ওয়াসিম ফিরোজ, দুদকের উপ পরিচাকল মোঃ নাজমুল হাসান, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান।
এদিকে, অভিযুক্ত ওএমএস ডিলারদের রক্ষা করতে একটি মহল তৎপরতা শুরু করেছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তি,সাংবাদিক এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের একটি মহল রয়েছে। এই মহলটি ওই সব ওএমএস ডিলারদের দ্বারা সুবিধাভোগি বলে মনে রছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এজন্য তারা জেলা প্রশাসনের তদন্তে তথ্য প্রমানসহ অভিযুক্ত ওএমএস ডিলারদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।