অনলাইন ডেস্ক :
৯ বছর ৩ মাস বয়সের শিশু শান্ত। জন্মের পর শিশুটি শান্ত স্বভাবে বেড়ে উঠবে এমনটিই প্রত্যাশা করে বাবা-মা নাম রেখেছিলেন শান্ত। কিন্তু শান্ত তার বাবা মায়ের দেওয়া নামের বিপরীতভাবে বেড়ে উঠতে শুরু করে। নাম শান্ত হলেও সে অশান্ত আচরণ শুরু করে। যেটি বাবা-মার জন্য রীতিমতো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই শিশু শান্তকে ৫ বছর ধরে দড়ি ও শিকলে বাঁধা জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
শান্তর বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ছাতিয়ান ইউনিয়নের কালিতলা এলাকায়। তার বাবা জসিম উদ্দিন একজন প্রান্তিক কৃষক।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শান্ত এখন তার পরিবারের জন্য বোঝা। শান্তর আচরণে তার পরিবারসহ প্রতিবেশীরাও অতিষ্ঠ। তাই সন্ধ্যা নামলেই শান্তকে নির্জন বাঁশ বাগানে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে আসেন তারা বাবা-মা।
শিশু শান্তর বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, আমার ছেলের বয়স বর্তমানে ৯ বছর ৩ মাস। জন্মের পরে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে তিন বছর বয়সে তার অবস্থা কিছুটা বুঝতে পারি। প্রথমে সে রান্না ঘরের গোবরের দেওয়া লাঠি (গরুর গোবর দিয়ে তৈরি জ্বালানি) খেতে শুরু করে। বাড়ির পাশের ময়লা-আবর্জনা, মাটি, সাবানের ফেনা, কলা গাছ, কপির ডাটা, জামের বিচি, মুরগির পায়খানা, ড্রেনের বর্জ খেতে দেখে আমি অবাক হই। এরপর আমি ২০১৪ সালে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। তবে পরে আর নিয়ে যেতে পারিনি। আমি পেশায় একজন দিনমজুর। জমি বর্গা নিয়ে চাষ করি ও অন্যের জমিতে লেবার দিয়ে সংসার চালায়। ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, একবেলা ভাত জোটে তো অন্য বেলা জোটে না। ছেলেকে চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা আমার নেই। শান্ত কাউকে ঘুমাতে দেয় না। রাত ২টা বাজলে সে ঘুমায়। রাত হলে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঢিল ছোড়ে। তাই দিনে ১৫-১৬ ঘন্টা তাকে বেঁধে রাখি।এ অবস্থায় আমি বর্তমানে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।
বাবা-মার সঙ্গে শান্ত। ছবি: বাংলানিউজশান্তর মা সিমা খাতুন বলেন, সে নিজেও রাতে ঘুমায় না অন্যকেও ঘুমাতে দেয় না। আমার ছোট ছেলেকে একাধিকবার মেরে ফেলতে গিয়েছিলো। নিজের সন্তানকে বেঁধে রাখা কোনো মায়ের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব না। শিশু শান্ত কারো সঙ্গে কথা বলে না। তার নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারে না। শুধু উল্টা-পাল্টা আচরণ করে।
এভাবে বেঁধে রাখলে শিশুটি আর কতদিন বেঁচে থাকতে পারবে এই প্রশ্ন এলাকার সাধারণ মানুষের।
শিশুটির পরিবার ও এলাকাবাসী শান্তর চিকিৎসার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এদিকে শান্তর বাবাব জসিম তার সন্তানের চিকিৎসা করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন করেছেন। তার নগদ হিসাব নম্বর- ০১৯২৩০৭৪৭০৭।
ছাতিয়ান ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, শান্তর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করা হয়েছে। পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সরকারি সব রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করি। আসলে শান্ত একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু। এ লকডাউন উঠে গেলে তাকে উন্নত সচিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।