জাতীয় ডেস্ক :
নির্ধারিত তিন বছরে কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর নদীবন্দর সড়কে ৯০ মিটার সেতুর অর্ধেক কাজ হয়নি। এক কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিল তুলে ঠিকাদার পলাতক। ফলে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন এক লাখের বেশি মানুষ। তবে এলজিইডি’র দাবি পলাতক ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে পুনরায় কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের সঙ্গে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ এবং সদর উপজেলার ঘোগাদহ, পাঁচগাছি ও যাত্রাপুর-এই চার ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র পথ কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়ক। শুধু তাই নয়, জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীবেষ্টিত যাত্রাপুর নদীবন্দর। এখানে সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার গরু-ছাগল, ধান ও পাটসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচার হাট বসে। জেলার মধ্যে এ হাট সবচেয়ে বড়। এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের সুলকুর বাজার এলাকায় অবস্থিত সড়ক সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভেঙে ফেলা হয়।
সেই সাথে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের নতুন সেতু নির্মাণের জন্য বসুন্ধরা অ্যান্ড কেএম আবু বকর জেভিকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সে সময় ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলে এর পাশে যেনতেনোভাবে চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়। শুষ্কমৌসুমে পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করলেও যানবাহন চলে না। বর্ষায় ডুবে গেলে হেঁটে পার হওয়া যায় না। নৌকায় পারাপার করতে হয়।
নির্মাণাধীন সেতুটির পূর্ব পাড়ে ৪টি ইউনিয়ন অবস্থিত। আর পশ্চিম পাড়ে জেলা শহর। পূর্ব পাড়ের পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সেতুটি সময় মতো না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বিকল্প সড়কটি খুব সরু। যানবাহন চলাচল করতে পারে না। শুষ্ক পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে ওই স্থানটুকু পারাপার করতে হয়। ফলে মালামাল পরিবহন করতে দুর্ভোগের পাশাপাশি ব্যয় বেড়ে গেছে। সেইসাথে অসুস্থ মানুষের উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা ও জেলা সদরে যেতে কষ্টের সীমা নেই।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যথাযথ তদারকি না থাকায় ঠিকাদার গাফলতি করার সুযোগ পেয়েছে। এখন কাজ বন্ধ করে সটকে পড়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ও কেএম আবু বকর জেভি’র অংশীদার বদরুল হাসান মামুন দাবি করেছেন, তারাও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। কেননা কাজটি তারা করেননি। গোলাম রব্বানী নামের একজন ঠিকাদার তাদের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি নিয়েছেন। পরে তারা জানতে পারেন ওই ব্যক্তি ঠিকমত কাজ না করে কেটে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যাদেশ বাতিল করতে অনুরোধ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম এলজিইডি”র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পূর্বের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট কাজের প্রাক্কলন তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে জন দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুততম সময়ের মধ্য অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে।
