হোম ফিচার মনিরামপুরে ডোঙা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :

মনিরামপুরের কপালিয়া গ্রামের কার্তিক মণ্ডল ডোঙা তৈরির কাজ করেন ৪০ বছর। প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন তিনি। এরপর ২৭ বছর ধরে কাজ করছেন কুমারঘাটা বাজারে।

শনিবার কথা হয় কার্তিকের সাথে। তিনি বলেন, বংশ পরস্পরায় একাজ করছি। একটা ছেলে তাকেও শিখাইছি। ১০ টাকা থেকে শুরু করে এখন ৬০০ টাকা মজুরি পাই। সারা বছর কাজ চলে। বসে থাকা লাগে না।

খুলনার কয়রা থেকে কুমারঘাটা বাজারে নৌকা বানাতে এসেছেন মুজিবর রহমান। তিনি বলেন, তিনজনে মিলে দিনে একটা ডোঙা তৈরি করি। এক হাজার টাকা থেকে ৮০০ টাকা হাজিরা পাই। ছয় মাস এখানে করি। বাকি সময় মংলায় কাজ করি।

এখন বর্ষা মৌসুম। মনিরামপুরের খাল বিলে পানি থই থই করছে। পানি জমে ফেঁপে উঠেছে এই অঞ্চলের মাছের ঘেরগুলো। এরই মধ্যে ধুম পড়েছে ডোঙা তৈরির। মাছের ঘেরে খাবার নেয়া, বিলে মাছধরা, লোক পারাপারসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয় ডোঙাগুলো।

ডোঙা তৈরিতে অতি পরিচিত এখানকার কুমারঘাটা বাজার। বাজারে ২২-২৩টি ডোঙা তৈরির ঘর রয়েছে। যেখানে ব্যস্ত সময় খাটাচ্ছেন ৬০-৭০ শ্রমিক। এই বাজার ছাড়াও উপজেলার কপালিয়া, কালিবাড়ি, নেহালপুর ও কোনাকোলা এলাকায় চলে ডোঙা তৈরির কাজ।

কুমারঘাটা বাজারের ডোঙা তৈরির অধিকাংশ শ্রমিক খুলনার কয়রা এলাকা থেকে আসেন। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত তারা এখানে কাজ করেন। বাকি ছয় মাস কাজ করেন মংলা এলাকায়। আর স্থানীয় শ্রমিকরা এখানে কাজ করেন সারা বছর । শ্রমিকদের অধিকাংশ বংশ পরস্পরায় একাজে জড়িত।

মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বটিয়াঘাটা, কেশবপুর, ডুমুরিয়া, অভয়নগর, নড়াইল এলাকায় যায় এসব ডোঙা। ক্রেতারা এসে ৬-১২ হাজার টাকায় কেনেন এগুলো।

পেরেক এবং মেহগনি, পুইয়ে, লম্বু ও খই কাটে তৈরি হয় ডোঙা। তিনজন শ্রমিক দিনে একটি করে ডোঙা তৈরি করেন। কাজ শেষে বৈদ্যুতিক মেশিনে ফিনিশিং দিয়ে রোদে শুকিয়ে কাল রং করা হয় ডোঙায়।

কুমারঘাটা বাজারে শ্রমিক খাটিয়ে প্রথম ডোঙা তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় মোস্তাক আহমেদ মোল্লা। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, তিন জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন আমার ৬টা ঘরে ১৮ জন কাজ করে। বাজারে ছয়জন মালিকের ২২-২৩টা ঘরে কাজ চলে।

তিনি বলেন, ডোবা এলাকা। ফসল তেমন হয়না। সারা বছর খাল বিলে পানি থাকে। সব সময় ডোঙা বিক্রি হয়। ঘের মালিকরা কেনেন বেশি। বর্ষার চারমাস লোকজনের জিরেন (বিশ্রাম) থাকে না। একটা ডোঙায় দেড়-দুই হাজার টাকা লাভ থাকে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন