স্টাফ রিপোর্টার, কেশবপুর (যশোর) :
যশোরের কেশবপুরে এক যুবকের বিরুদ্ধে অন্যের জমিতে বোরিং দেখিয়ে প্রতারণা করে সেচ প্রত্যয়ন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলার আওয়ালগাতী গ্রামে আলমগীর হোসেন পুণতদন্তসহ তার সাময়িক স্থগিত হওয়া সেচ প্রত্যয়নটি ফিরে পেতে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্যে বিএডিসি সেচ এর সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ালগাতী গ্রামের আজিবার রহমান সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন গত ২৪ জানুয়ারী কাবিলপুর মৌজার ১৪৯ দাগের ৯ শতক জমিতে অগভীর নলকূপ স্থাপণ করে বৈদ্যুতিক সংযোগসহ সেচ প্রত্যয়নপত্র পাবার জন্যে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদন্ত শেষে গত ৪ মার্চ উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি তাকে সেচ প্রত্যয়নপত্র দেয়। যার লাইসেন্স নং- ১১২। ওই স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইবার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৫ এপ্রিল সমীক্ষা ফি প্রদান করেন।
কিন্তু একই গ্রামের আবুল কালাম সরদারের ছেলে রুস্তম আলীও গত ২ ফেব্রæয়ারী ১৪৯ দাগের জমিতে সেচ প্রত্যয়নপত্র পাবার জন্যে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি বরাবর আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগণ তদন্তে আসলে প্রতারণা করে তার পিতা আবুল কালাম সরদার ২০০০ সালে ১৪৩ দাগের যে জমি আলমগীর হোসেনের পিতা আজিবার সরদারের কাছে বিক্রি করা জমির বোরিং দেখিয়ে প্রতারণা করে সেচ কমিটির প্রত্যয়নপত্র নেয়। যা ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন নীতিমালা বহির্ভূত। এ সেচ প্রত্যয়নপত্র পেয়ে রুস্তম আলী সুকৌশলে আলমগীর হোসেনের সেচ প্রত্যয়নটি স্থগিতের জন্যে বিএডিসির সচিব (সেচ) বরাবরে আবেদন করেন।
এ সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা তদন্তে আসলে রুস্তম আলীর ১৪৯ দাগে বোরিং না থাকায় তাদের সাথে প্রতারণা করে আলমগীর হোসেনের ১৪৩ দাগের জমির বোরিং দেখায়। যে কারণে আলমগীর হোসেনের সেচ প্রত্যয়নটি সাময়িক স্থগিত করা হয়। এ সময় রুস্তম আলী ইলেকট্রিশিয়ান আলতাফ হোসেনের সাথে যোগসাজসে অবৈধ বৈদ্যুতিক সেচ সংযোগ পাবার জন্যে সাগরদাঁড়ি সাব জোনাল অফিসে গত ১২ এপ্রিল আবেদন করেন। এ ঘটনা জানতে পেরে আলমগীর হোসেন পুণতদন্তসহ তার সাময়িক স্থগিত হওয়া সেচ প্রত্যয়নটি ফিরে পেতে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকার রজব আলী সরদার, মাস্টার জাহিদুল ইসলাম ও ছমির আলীসহ একাধিক কৃষক জানান, রুস্তম আলী যে দাগে আবেদন করেছে, সে দাগে তার দোকানঘর অবস্থিত। কোন বোরিং নেই। সে তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে যে বোরিং উত্থাপণ করেছে তা আলমগীর হোসেনের। আলমগীর হোসেনের লাইসেন্স বরাবর ১৪৯ দাগ ও রুস্তম আলীর উল্লেখিত ১৪৩ দাগে পৃথক দুটি বোরিং আলমগীর হোসেনের। কিন্তু রুস্তম আলীর কোন বোরিং না থাকা সত্তে¡ও তাকে সেচ প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া রুস্তম আলী প্রতারণা করে আরও একটি শিল্প সংযোগ লাইন নিয়েছে। কিন্তু সেখানে শিল্প লাইনের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিল্প লাইনের সংযোগ নিয়ে সেচের কাজে ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে।
রুস্তম আলী বলেন, আমি ১৪৩ দাগের বোরিং ব্যবহার করি। ওই দাগের জমি আমার পিতা গত ২০০০ সালে আলমগীর হোসেনের পিতার নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। ১৪৯ দাগের সেচ লাইসেন্সের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। শিল্প লাইনের সংযোগ নিয়ে সেচের কাজে ব্যবহার করছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। ইলেকট্রিশিয়ান আলতাফ হোসেন বলেন, আমার অনেক লাইসেন্স আছে। রুস্তম আলীর সেচ লাইনের বিদ্যুৎ জ্বালিয়ে দেয়া পর্যন্ত আমি দায়িত্ব নিয়েছি। গত ১২ এপ্রিল পল্লী বিদ্যুতের সাগরদাঁড়ি সাব-জোনাল অফিসের এজিএম কম আশরাফুল ইসলামের নিকট রুস্তম আলীর সেচ লাইনের সমীক্ষা জমা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের কেশবপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল লতিফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।