চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি:
চরফ্যাশন উপজেলায় একাধিক অবৈধ ভাটা থাকলেও যার নেই কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও ছাড়পত্র।
এছাড়াও ঘনবসতী এলাকায় ফসল নষ্ট করে ফসলী জমিতেও অবৈধ এ ইট ভাটা গড়ে উঠছে অহোরোহো।
প্রশাসনের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করেও ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে।
চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা চর কলমি ইউনিয়নের আঞ্জুরহাট বকসী মৎস্যঘাট এলাকায় বাজারের ভিতরে রয়েছে ফরাজি ব্রিক্স।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার, হাজার মন লাকড়ি ও গাছের গুড়ি দিয়ে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে।
এমন অবস্থায় দিনরাত ইট তৈরী করে সারিসারি ওই ইট সাজিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে।
স্থানিয় এলাকাবাসীরা বলছেন,দীর্ঘ ২০বছর যাবত এই এলাকায় লাকড়ি পুড়িয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
এর আগে সিফাত ব্রিক্স এখানে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ালেও বর্তমানে মালিকানা বদল হয়েছে। স্থানিয় শানু ফরাজী এ ভাটাটি ক্রয় করেছেন।
স্থানিয় এলাকাবাসীরা আরো জানান,
ফরাজি ব্রিক্স ছাড়াও কলমী ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল মৌজায় প্রায় ৫ একর সরকারি জমি বন্ধবস্ত নিয়ে ফসলী জমি নষ্ট করে
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত অনেক ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও ছাড়পত্র না থাকলেও
অদৃশ্য অনুমোদন ও মাসিক চাঁদার ছাড়পত্রেই চলছে এসব ইট ভাটা।
এমনটাই দাবি করেন স্থানিয় সচেতন মহোল।
এ অবৈধ ইট ভাটা নির্মাণসহ ইট পোড়ানোর প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও
উপজেলা প্রশাসন ও ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিয়ে জনমনে সঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীরা বলেন, এর আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেও বহাল তবিয়তে চলছে এসব অবৈধ ভাটাগুলোর কার্যক্রম।
বকসী মৎস্যঘাট এলাকার অবৈধ ফরাজী ইট ভাটা ও চর-কলমি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অবৈধ
এ ভাটাটি হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও শতাধিকের বেশি বসত বাড়ি এলাকায় চালু করে ইট তৈরীতে তোরজোড় চালাচ্ছে ভাটা কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইট ভাটার কয়েকজন স্থানিয় মিস্ত্রি জানান, ফরাজী ভাটায় নদী ও খাল থেকে মাটি এনে ইট তৈরীর কার্যক্রম শেষ এখন শুধু ড্রামশিট চিমনিতে আগুন দেয়ার বাকি।
এছাড়াও চর কলমী ৯নং ওয়ার্ডে পরিবেশ ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া ভাটায় সরকারী খাস জমিতে চলছে রাতভর ড্রেজিং।
এছাড়াও ফসলী জমির পাশে ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে মাটি কেটে গভীর খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানটি।
ইট ভাটা সংলগ্ন খাসপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দক্ষিণ পার্শ্বে একটি সরকারি খাল থাকায় এবং
ভাটা কর্তিৃপক্ষ বন্ধবস্ত নেয়া জমিতে ওই এলাকাটির সামনেই গভীর খনন করায় বাড়ীর শতাধিক মানুষের চলাচলসহ নানারকমের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
ফসলি জমির কৃষক আলমগীর,নাজমা বেগমসহ একাধীক এলাকাবাসী জানান, ভাটা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পীতভাবে তাদেরকে ফসলী জমি ও বসতবাড়ী থেকে উৎখাত করার পায়তারা করছে।
এছাড়াও ভাটা দু’টিতে গিয়ে দেখা যায়,হাজার,হাজার মন কাঠ ও লাকড়িসহ গাছের গুড়ি জোড়ো করা হয়েছে। গাছ কেটে লাকড়ি তৈরী করার জন্যেও রয়েছে দুটি স’মিল।
৯নং ওয়ার্ডের ভাটার দুই পাশে রয়েছে হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান ক্ষেত ও দুই পাশে রয়েছে ফলদ ও বনজ বাগানসহ শতাধিকের বেশি বসত বাড়ি।
এবং আঞ্জুরহাটের বকসী মৎস্যঘাট এলাকার ফরাজী ভাটায়ও রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ী ও একটি হাটবাজার। যেখানে নেই ৫০ থেকে ১০০ গজের দূরত্ব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক ও বসতবাড়ীর বাসিন্দারা বলেন, কাচাঁ ও পাকা ধান দ্রæত কেটে নিতে হচ্ছে। ইট ভাটাটি খুবই দ্রæত চালু হবে।
এমন অবস্থায় আমরা অসহায়। আমাদের কিছু করার নেই। আবেগ ও কান্না ভড়া কন্ঠে এক বৃদ্ধা বলেন, আমার কেউ নেই আমি কোথায় যাব।
ময়ফুল বেগম বলেন, ভাটা মালিক আবাসিক এলাকার ভিতরে এসে অবৈধভাবে এ ইট ভাটা তৈরী করার ফলে আমরা এখন নিরূপায় হয়ে গেছি।
এ ইট ভাটাটি আবাসিক বসত বাড়ি ও ফসলী জমির মধ্যখানে হওয়ায় কৃষকের ফসল ও জমিসহ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান স্থানিয়রা।
এছাড়াও বাজার ও বসতবাড়ি এলাকায় ফরাজী ইট ভাটাটি চালু করার সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা রয়েছে আতঙ্কে। তারা বলছেন ব্রিক্সটির কালো ধোয়ায় ব্যবসার অনেব ক্ষতি হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিষয়ে ফরাজী ইট ভাটার সহাকারী ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন মুঠো ফোনে জানান,
তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য দরখাস্ত জমা দিয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে ব্রিক্স ফিল্ডকে অনুমোদন দেয়না। তাই তাদের ছাড়পত্র বা অনুমোদন নেই।
পরিবেশ বান্ধব ঝিকঝাক ইট ভাটার জন্য প্রায় ৮থেকে ১০ লাখ ইট পোড়াতে হবে।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক জানান, ড্রামসিট চিমনি ব্যবহার করা দন্ডনিয় অপরাধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের ভাটাটিতে অভিযান পরিচালনার জন্য স্থানিয় ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
অনুমোদনপত্র না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং বকসী মৎস্যঘাটের ফরাজী ব্রীক্স ফিল্ডেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।