হোম অন্যান্যসারাদেশ দেবহাটা ভুমি অফিসে চলছে দূর্নীতি-ঘুষ বানিজ্যের মহোৎসব : নেপথ্যে সার্ভেয়ার সাইদুর ও নায়েব নাজমুল সিন্ডিকেট

দেবহাটা ভুমি অফিসে চলছে দূর্নীতি-ঘুষ বানিজ্যের মহোৎসব : নেপথ্যে সার্ভেয়ার সাইদুর ও নায়েব নাজমুল সিন্ডিকেট

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 113 ভিউজ

দেবহাটা প্রতিনিধি :

দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও সখিপুর ইউনিয়ন দুটি নিয়ে গঠিত সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসে চলেছে দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের মহোৎসব। প্রতিনিয়ত নামজারি কেস ও জমির দাখিলাসহ নানা খাতে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্য সংঘটিত হচ্ছে উপজেলার বৃহৎ দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তিরস্থল হিসেবে পরিচিত একমাত্র এই ভুমি অফিসটিতে। সেখানকার চলমান দূর্নীতি অনিয়মের মুলে রয়েছেন খোদ ভুমি অফিসটির সহকারী ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. নাজমুল হাসান খান চৌধুরী (তপু) ও তারই আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা দিবারাত্রির সঙ্গী কথিত পিএস নাসির উদ্দীন।

দুটি ইউনিয়নের কার্যক্রম একটি ভুমি অফিসে চলমান থাকায় ওই ভুমি অফিসটিতে তিনজন ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তার পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সেখানে একজন কর্মকর্তা দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে করে একদিকে সেবাপ্রার্থীরা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে একক আধিপত্যে ক্রমশ দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের পরিধি বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ভুমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ও তার গৃহপালিত কথিত পিএস নাসির উদ্দীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, নাজমুল হাসান খান চৌধুরী ইউনিয়ন ভুমি অফিসের উপ-সহকারী ভুমি কর্মকর্তা হওয়া স্বত্ত্বেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে সহকারী ভুমি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ সীমাহীন দূর্নীতি-অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ হয়রানীর শিকার একাধিক সেবা প্রার্থীদের।

নামজারির প্রতিটি কেসের তদন্ত প্রতিবেদনের নামে সেবা প্রার্থীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন নাজমুল হাসান খান চৌধুরী। শুধু নামজারি কেস নয়, জমির দাখিলা ও সরকারী জমি বন্দোবস্ত নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকেও তিনি হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত মোটা অংকের টাকা। এমনকি প্রতিদিনই নাজমুল হাসান খান চৌধুরীর পকেটে মোটা অংকের অবৈধ অর্থ পকেটস্থ হওয়ায় সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়াতে নিজের বাড়ী থাকা স্বত্ত্বেও সেখান থেকে দেবহাটার অফিসে যাতায়াত না করে উল্টো কালীগঞ্জ উপজেলার নলতাতে ফ্লাট ভাড়া করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সুত্রটি আরো জানায়, সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান খান চৌধুরীর এসকল অপকর্মের সহযোগী তারই গৃহপালিত কথিত পিএস নাসির উদ্দীন। ভুমি অফিসের কেউ না হওয়া স্বত্ত্বেও সার্বক্ষনিক নাজমুল হাসান চৌধুরীর পিছনে লেজের মতো জুড়ে থাকে এই নাসির। সকালে তার সাথেই ভুমি অফিসে আগমন ঘটে নাসিরের। তারপর ওই অফিসের কোন দায়িত্বে না থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে নাজমুল হাসান চৌধুরীর নির্দেশনা মতো মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়, অফিসের গুরুত্বপূর্ন ফাইল, কাগজপত্র ও নথিপত্র ঘাটাঘাটি, টাকা নিয়ে জমির দাখিলা কাটা, একজনের জমির পর্চা ও খতিয়ান অন্যের কাছে সরবরাহ করা, মোটা অংকের চুক্তিতে নামজারী কেস ও ঘুষের টাকা নিয়ে উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইদুর রহমানের কাছে অবাধ যাতায়াত সবটাই করতে থাকে ওই নাসির উদ্দীন। শুধু তাই নয়, দেবহাটা থেকে কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর ভুমি অফিসেও নাসির উদ্দীনের অবাধ যাতায়াত। মুলত দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর ভুমি অফিসের নানা দুই নাম্বারী কাজে চুক্তিবদ্ধ হন নাজমুল হাসান খান চৌধুরী, তারপর তার কথিত পিএস নাসির উদ্দীনকে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সেসব কাজ গুলো সমাধান করেন তিনি।
সম্প্রতি দেবহাটার এক ব্যাক্তির (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে নামজারী করে দেয়ার জন্যও মোটা টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন দেবহাটা ও সখিপুরের ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান খান চৌধুরী ও উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইদুর রহমান।

এমনকি ভুয়া দলিল থাকা স্বত্ত্বেও তদন্ত প্রতিবেদন ভালো দিয়ে নামজারী করিয়ে দেয়ার কথা বলে ওই ব্যাক্তির কাছ থেকে নায়েব নাজমুল হাসান খান চৌধুরী পাঁচ হাজার টাকা এবং সার্ভেয়ার সাইদুর রহমান ছয় হাজার টাকাও হাতিয়ে নেন। টাকা নেয়ার পর কৌশলে জাল দলিলের ওই নামজারী কেসের ফাইলটিতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীনের সক্ষরও করিয়ে নেন নাজমুল হাসান ও সাইদুর রহমান। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেদের চাকুরী বাঁচাতে উপজেলা ভুমি অফিসেই ওই নামজারীর ফাইলটি আটকে রেখেছেন সার্ভেয়ার সাইদুর। উপজেলা ভুমি অফিসের চলতি বছরের নথিতে ওই ব্যাক্তি কেস নং-৪৮৮। যা তদন্ত করলে জাল দলিলের সত্যতা পাওয়া যাবে বলেও নিশ্চিত করেন নির্ভরযোগ্য সুত্রটি। দূর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার সাইদুর রহমান দেবহাটাতে যোগদানের আগে শ্যামনগর উপজেলা ভুমি অফিসে কর্মরত থাকাবস্থায় দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতি করে ধরা পড়লে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তাকে দেবহাটাতে শাস্তিমুলোক বদলি করেন। কিন্তু দেবহাটাতে যোগদানের পরেও বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুমি কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজোশে উপজেলার ভুমি ব্যবস্থাপনাকে বিতর্কিত ও দূর্নীতির চাদরে মুড়ে ফেলেছেন সার্ভেয়ার সাইদুর। ইউনিয়ন ভুমি অফিস ও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কিছু দালালদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন লাগামহীন এক দালাল সিন্ডিকেট।
বিভিন্ন ইউনিয়নের দূর্ণীতিবাজ ঘুষখোর ভুমি কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ও উপজেলা ভুমি অফিসের দালাল সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত হয়রানী ও প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের। তাই অবিলম্বে তাদের চলমান দৌরাত্ম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন