হোম অন্যান্যসারাদেশ দেবহাটায় আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বজনপ্রীতি, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রীডদের ছড়াছড়ি:

দেবহাটায় আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বজনপ্রীতি, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রীডদের ছড়াছড়ি:

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 89 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধি :

অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে স্বজনপ্রীতি এবং বহু ত্যাগী ও দু:সময়ের পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের নাম বাদ দিয়ে, নতুন এবং বিএনপি-জামায়ত থেকে আসা একাধিক অনুপ্রবেশকারী, নির্দলীয়, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সহযোগী সংগঠনের নেতা ও হাইব্রীডদের নাম স্থান পেয়েছে।  প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণের অভিযোগ উঠেছে।
এঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উক্ত প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি উল্লেখ করে বিতর্কিতদের নাম সুষ্ঠ যাচাই বাছাই পরবর্তী বাদ দেয়ার জন্য এবং ওই স্থানে বাদপড়া ত্যাগী, পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের নাম সংযোজনের জন্য ৩০ জন নেতাকর্মীর তালিকা সম্বলিত লিখিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেছেন তালিকা থেকে বাদপড়া নেতাকর্মীরা।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর দেবহাটার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্য থেকে শেখ মারুফ হোসেন, নাজমুস শাহাদাত, আবুল কাশেম, মোকছেদ আলীসহ ১৯ জন বাদী হয়ে স্বাক্ষর পরবর্তী লিখিত ওই অভিযোগ সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনের দপ্তরসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করে।

বিএনপি’র পলাশ এখন দেবহাটা আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটির  দপ্তর সম্পাদক!

দায়েরকৃত অভিযোগে প্রস্তাবিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই তালিকায় যেসকল ব্যাক্তিদেরকে সম্পুর্ন নতুন এবং বিএনপি-জামায়ত থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী, নির্দলীয়, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, হাইব্রীড বলে চিহ্নিত করেছেন তারা হলেন, প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি পারুলিয়ার প্রফেসর মো. আব্দুল কাদের মৃধা, সহ-সভাপতি কুলিয়ার আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সখিপুরের শ্রী দুলাল চন্দ্র ঘোষ, সহ-সভাপতি নওয়াপাড়ার শ্রী মধুসুদন সরকার, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক হাদিপুর হাইস্কুলের হেডমাস্টার আব্দুল জব্বার, বিএনপি থেকে এসে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বনে যাওয়া বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সখিপুরের সার ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম পলাশ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পারুলিয়ার আব্দুর রফিক, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নওয়াপাড়ার প্রভাষক আব্দুল গফফার, সাংগঠনিক সম্পাদক পারুলিয়ার মনিরুল ইসলাম মনি, কার্যকরী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে পারুলিয়ার আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, কুলিয়ার মৃনাল কান্তি হালদার, কুলিয়ার প্রভাষ চন্দ্র মন্ডল, বিএনপি থেকে আসা কুলিয়ার ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পারুলিয়ার মিজানুর রহমান মিন্নুর, জামায়ত পরিবারের সদস্য পারুলিয়ার শরিফুল ইসলাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগে আসা পারুলিয়ার রবিউল ইসলাম, সখিপুরের শাহিন উল্যাহ, সখিপুরের আব্দুল করিম, সখিপুরের আব্দুল খালেক পাড়, নির্দলীয় ব্যবসায়ী থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আসা সখিপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী শম্ভুনাথ মন্ডল, সখিপুরের শেখ রফিকুল বারী, সখিপুরের ইউপি সদস্য আকবর আলী, নওয়াপাড়ার আকদাস হোসেন মন্টু, নওয়াপাড়ার আফজাল হোসেন ও দেবহাটার মোহন কর্মকার।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য পারুলিয়ার আলহজ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকায় দলের জন্য নিবেদিত অনেককে বাদ দিয়ে যেভাবে অচেনা নতুন মুখ, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের স্থান দেয়া হয়েছে তা সাধারণ নেতাকর্মীদের জন্য হুমকি স্বরুপ। এসকল অচেনা নতুন মুখ, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের মধ্যে সবচেয়ে সমালোচিত ও বিতর্কিথ বিএনপি থেকে সরাসরি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির দপ্তর সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হওয়া সখিপুরের শরিফুল ইসলাম পলাশ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনের ফুফাতো ভাই। বিতর্কিত এই শরিফুল ইসলাম পলাশ প্রকাশ্যে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এবং সহিংসতাকালীন সময়ে সরকার বিরোধী নানা কর্মকান্ডে তার নেতৃত্ব ও ইন্ধন থাকলেও কেবলমাত্র শেখ ফারুক হোসেন রতনের ফুফাতো ভাই হওয়ায় তার সব অপকর্ম আড়াল করে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দপ্তর সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর এসকল বিতর্কিত ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত ৬১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটির তালিকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি সুপারিশসহ স্বাক্ষর পরবর্তী অনুমোদনের প্রস্তাব জানিয়ে  সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের কাছে প্রেরণ করেন। তারআগে বিগত বছরের ১লা ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়। ওই সম্মেলনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আলহাজ্ব মুজিবর রহমান পুনরায় সভাপতি এবং মনিরুজ্জামান মনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে থমকে যায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রণয়ন ও অনুমোদনের কার্যক্রম।
সর্বশেষ সম্মেলনের প্রায় ১১ মাস পর তড়িঘড়ি করে প্রণয়নকৃত প্রস্তাবিত তালিকা অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে।
এদিকে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাবেক বহু নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন নতুন নির্দলীয় ব্যাক্তি, ব্যবসায়ী, বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী, জামায়ত পরিবারের সদস্য ও হাইব্রিডদের উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন পদে স্থান দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান মুখ খুলতে রাজি হননি।
পরবর্তীতে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করা হলে সভাপতি মুনসুর আহমেদ জরুরী মিটিংয়ে রয়েছেন বলে জানান এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন