হোম অন্যান্যসারাদেশ চেয়ারম্যানের আশ্রয়ে আসামীরা : অভিযোগ বাদী পরিবারের

চেয়ারম্যানের আশ্রয়ে আসামীরা : অভিযোগ বাদী পরিবারের

কর্তৃক
০ মন্তব্য 137 ভিউজ

তপন চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মহান্দী গ্রামের নাসিমা হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে প্রভাবশালী জন-প্রতিনিধি মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন তিনি। মামলাটি মিমাংসা করে নিতে বাদীকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি টাকা নিয়ে মিমাংসার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে বাদীকে।

মামলার বাদীর উপরোক্ত অভিযোগের তীর খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আজিজুর রহমান রাজু’র দিকে। চেয়ারম্যান নিজে আসামীদের পক্ষ নেওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন মামলার বাদী নাজের শেখ। যদিও নাসিমা হত্যা মামলার চার জন স্বাক্ষী গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এসএম আজিজুর রহমান রাজু’র সমার্থক ছিলেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আসামী পক্ষে আছেন চেয়ারম্যান, আর বাদীর পক্ষে মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন তার ঘনিষ্ট চার জন সমার্থক। তবে পুলিশ নাসিমা হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তালা থানার ওসি।

তবে খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আজিজুর রহমান রাজু বলেন,‘আমি কিছুই জানিনা।  আমি সেখানে যায়নি। অসুস্থ অবস্থায় বাড়ীতে আছি।’

অথচ নিহতের ননদ ভানু বিবি জানান, চেয়ারম্যান এসএম আজিজুর রহমান রাজু আসামীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে ও প্রকৃতদোষীদের আড়াল করতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর কারণে মামলার বাদিসহ তার পরিবার এখন চরম নিরাপ্তাহীনতায় আছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘আমার ভাই-বৌকে আসামীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। ভাবি মারা যাওয়ার পরও চেয়ারম্যান আমাদের দেখতে আসেনি। বর্তমানে তিনি এলাকায় এসে আসামীদের শেল্টার দিচ্ছেন।’

নিহতের বোন জামাই মীর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মামলার আসামীরা চেয়ারম্যানের সমার্থক হওয়ায় তিনি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। মামলা তুলে নিতেও হুমকি দিচ্ছেন বাদীসহ তার পরিবারকে। আসামীদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রশাসনও আসামী গ্রেপ্তার করতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নিহতের প্রতিবেশি জাহানারা বেগম জানান, ঘটনার দিন নাসিমাকে তারা আহত অবস্থায় পেয়েছিলেন। তাকে উদ্ধার করে গ্রাম্য ডাক্তার শহিদুল ইসলামের কাছে নিয়ে যান তারা। কিন্তু তিনি টাকা ছাড়া চিকিৎসা করবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে টাকা জোগাড় করে তার কাছে নিয়ে গেলে তিনি ইনজেকশন ও ঔষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরের দিন সকালে মারা যান নাসিমা।

মামলার স্বাক্ষী জুলফিকার আলী বলেন, নাছিমা হত্যা মামলায় চেয়ারম্যান রাজু আসামীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাদীসহ তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তবে নাসিমার মরাদেহ দেখতে না আসলেও বর্তমানে আসামীদের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি।

মামলার স্বাক্ষী শওকত হোসেন বলেন, নাছিমা হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী তাকে নানা ভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ভাবে তাকে হুমকি দেওয়ায় এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন তিনি।

মামলার স্বাক্ষী মনিরুজ্জামান মদন বলেন, তিনি গত ইউপি নির্বাচনে আজিজুর রহমান রাজুর একানিষ্ট কর্মী ছিলেন। নাছিমা হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় বিভিন্ন ভাবে তাকে সহ অন্য স্বাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি চেয়ারম্যান হয়ে আসামী পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান যতই হুমকি দিক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। যে ভাবে নাছিমাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না।’

বিষয়টি নিয়ে নিয়ে ডাক্তার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী জানান, তার স্বামী ঘটনার দিন একটু রাত করে বাড়িতে গেছেন। তিনি ওই রোগী (নাসিমা) দেখে অনেক রাতে বাড়িতে আসেন।

মামলার বাদী নাজের শেখ বলেন, তার স্ত্রীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে আসামীরা। কিন্তু চেয়ারম্যান আসামীদের পক্ষ নিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। আসামীরা রাতের আধারে বাড়ী এসে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আজিজুর রহমান রাজু বলেন, আমি আসামীদের পক্ষে নয়। বিষয়টি সুষ্ট তদন্তের দাবী জানান তিনি।

তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল জানান,নাসিমা হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত চলমান থাকায় আর কিছুই বলতে রাজি হয়নি তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন