হোম জাতীয় মণিরামপুরে ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মধ্যে বিভক্ত

মণিরামপুরে ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মধ্যে বিভক্ত

কর্তৃক
০ মন্তব্য 71 ভিউজ

যশোর অফিস:

যশোরের মণিরামপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে চলছে ব্যাপক লবিং-গ্রæপিং। ২০১২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে থানা, পৌর ও কলেজ শাখার কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ ৮ বছর পর ওই কমিটি বাতিল করে আহবায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এই কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিবাদমান মুছা-ইকবাল গ্রæপিংয়ের ধারাবাহিকতা ছাত্রদলের ভেতরেও বিরাজ করছে। থানা, পৌর ও কলেজ শাখার কমিটিতে স্থান পেতে ইকবাল-মূছা পন্থিরা দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা গ্রপের থানা ছাত্রদলের আহবায়ক প্রার্থী ইউনুছ আলী জুয়েল বিবাহিত। গঠনতন্ত্র অনুসারে বিবাহিত, অছাত্র এবং বয়স্করা ছাত্রদলের রাজনীতিতে থাকতে পারবেন না।

জুয়েলের বিরুদ্ধে চালুয়াহাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকা এবং তিনি একজন বিবাহিত বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের খুলনা বিভাগীয় মনিটরিং কমিটির কাছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনুছ আলী জুয়েল চালুয়াহাটি গ্রামের অহিদুজ্জামান বাবুলের মেয়ে শাহনাজ আক্তার রুমিকে বিয়ে করেন।

বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহনাজ আক্তারের মা জহুরা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জুয়েল অনেক রকম চেষ্টা করে। তখন মেয়েকে ঢাকায় আমার ভায়ের বাসায় রেখেছিলাম। সেখান থেকে জুয়েল মা-বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার কাথা বলে তাকে নিয়ে যায়। সেখানে তারা বিয়ে করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নভেম্বর তাদের ডিভোর্স করানো হয়।

মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের ম্যারেজ রেজিষ্টার মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ জানান, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তার কাছে ইউনুছ আলী জুয়েল ও শাহনাজ আক্তারের বিবাহ বিচ্ছেদ আবেদন করেন। তিন মাস পর ২০১৫ সালে ২৭ ফেব্রæয়ারি তা রেজিষ্টার হয়।

এদিকে চালুয়াহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়ন পত্রে উল্লেখ করেছেন, ইউনুচ আলী জুয়েল তথ্য গোপন করে ভুল বুঝিয়ে চলতি বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি অবিবাহিত সনদপত্র গ্রহন করেন। সনদপত্রটি বাতিল করা হলো।

গত ২৯ আগস্ট দেওয়া প্রত্যয়ন পত্রে চেয়ারম্যান আরো উল্লেখ করেছেন, সত্যতা যাচাই-বাছাই করে নতুন করে সনদপত্র দেওয়া হলো। ইউনুচ আলী জুয়েল ২০১২ সালে চালুয়াহাটী গ্রামের অহিদুজ্জামান বাবুলের কন্যা শাহনাজ পারভীন রুমিকে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ করেছিলো।

এবিষয়ে জানতে ইউনুচ আলী জুয়েলের মোবাইল ফোনে ফোন করা হলে তিনি জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আছি। পরে ফোন করছি বলে তিনি আর ফোন করেননি।

খুলনা বিভাগীয় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে চার সদস্যের একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। খুলনা বিভাগীয় এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মিজানুর রহমান সজিবকে। অন্য সদস্যরা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুলতানা জেসমিন জুঁই এবং খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল আহমেদ সুমন।

জানা গেছে, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে কমিটির নেতৃত্বে আনতে নিরপেক্ষভাবে এ কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক জেলা কমিটি থানা, পৌর এবং কলেজ শাখার পদের জন্য ফরম বিতরণ করে তা পূরনের পর প্রার্থীদের কাছ থেকে গ্রহন করেছেন। জেলা নেতৃবৃন্দ যাচাইবাছাই করে তালিকাসহ তা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে (দায়িত্ব প্রাপ্ত তিন সদস্যের টিম) প্রেরণ করেছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটি এসব আবেদন আবারও যাচাই-বাছাই শেষে চুড়ান্ত অনুমোদন দিবেন। কিন্তু মনিরামপুরে এ তিনটি ইউনিটের আহবায়ক এবং সদস্য সচিব পদের জন্য ছাত্রদলের মধ্যে প্রচন্ড লবিং-গ্রপিং শুরু হয়েছে।

এবিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় মনিটরিং কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান সজিব মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফোনে রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি।এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ সুমন বলেন, কোন বিবাহিত, অছাত্র, সংগঠন বিরোধী কর্মকাÐসহ রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সাথে জড়িত কেউ ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানাগেছে মনিরামপুর বিএনপির বিবদমান দুই গ্রপের (থানা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন এবং সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা) রেশারেশি এসে পড়েছে ছাত্রদলের মধ্যে। ইতিমধ্যে ইকবাল পন্থির থানা ছাত্রদলের আহবায়ক প্রার্থী ওলিয়ার রহমান, সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন, পৌর শাখার আহবায়ক প্রার্থী কামরুজ্জামান, সদস্য সচিব এনামুল হক এবং কলেজ শাখার আহবায়ক প্রার্থী ইনামুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হোসেন ফরম জমা দিয়েছেন।
অপরদিকে মুছা পন্থির থানা আহবায়ক প্রার্থী ইউনুচ আলী জুয়েল, সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন, পৌর আহবায়ক প্রার্থী মিকাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মুস্তকিম সাকিব, কলেজ শাখার আহবায়ক প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান মিঠু, সদস্য সচিব রকিব হাসান ফরম জমা দিয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন