নড়াইল অফিস :
স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তির জন্য সেতুটি দক্ষিন পাশে মাত্র ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মান করতে পারছেনা ঠিকাদাটি প্রতিষ্ঠান। আর আইনি জটিলতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেও কাজের জন্য চাপ দিতে পারছেনা নড়াইল এলজিইডি বিভাগ। ফলে ১০ কোটি টাকার বেশি ব্যায়ে প্রত্যান্ত অঞ্চালে সেতু নির্মান করলেও তার সুফল পাচ্ছেনা এলাকাবাসী। নির্মানের পরও সেতুটি চালু না হওয়ায় দূর্ভোগের হাত থেকে শেষ রক্ষা পাচ্ছেনা ৫টি ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ। জমি অধিগ্রহন করে সংযোগ সড়ক করতে হলে ১৫-১৬ শতক জমি অধিগ্রহন করতে হবে। স্থানীয় বাজার অনুযায়ী এই ১৬ শতক জমির মূল্য মাত্র ২ লক্ষ টাকা। অথচ ২ লক্ষ টাকার জমির জন্য ১০ কোটি টাকার সেতু ব্যবহার করতে পারছেনা ভুক্তভোগিরা। দ্রæত সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
এলজিইডি সুত্রে জানাগেছে, এলাকার জনগনের চাহিদার প্রেক্ষিতে লোহাগড়া উপজেলার এ্যড়েন্দা-মানিকগঞ্জ সড়কের গন্ডব এলাকায় ১০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৭৫.২০ মি দৈর্ঘের সেতুটি নির্মান কাজ শুরু হয় ২মে ২০১৬ সালে চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যার্থ হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরে সংসধিত চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করার জন্য সময় দেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত। সংসধিত চুক্তি অনুযায়ীও কাজ শেষ করতে পারেনি। পরে ২০১৯ সালের ১ মে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য লিখিত আবেদন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেই সময় লিখত আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ বৃদ্দির জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয় নড়াইল এলজিইডি বিভাগ।
এখনও সেই চিঠির জবাব পায়নি নড়াইল এলজিইডি বিভাগ। দেড় বছর সময় নিয়ে কাজ শুরু করলেও বিভিন্ন জটিলতার কারনে ৪ বছরেও শেষ হয়নি সেতুটির কাজ। খুড়িয়ে খুড়িয়ে সেতুটির মুল কাজ শেষ হলেও দুপাশের সংযোগ সড়ক নির্মান করতে ব্যার্থ হওয়ায় সেতুটির সুফল পাচ্ছেনা এলাকাবাসী। সরেজমিনে যেয়ে দেখাগেছে, সেতুটির মুল কাজ শেষ হয়েছে। দুপাশের সংযোগ সড়ক এখনও করা হয়নি। রাস্তা থেকে সেতুটিতে উঠতে গেলে অন্তত ২০ ফুট উচু দিয়ে সেতুটিতে উঠতে হচ্ছে। একটি বাইসাইকেল চালিয়েও সেতুতে উঠার উপায় নেই। ইঞ্জিন চালিত কোন যানবহনই সেতু দিয়ে যেতে পাছেনা। মুল সেতুতে এখনও রং এর কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ ৪ বছর যাবৎ খুড়িয়ে খুড়িয়ে (আস্তে আস্তে) চলছে সেতুর মূল কাজ। এখন মূল কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মান না করায় সেতুটি তারা ব্যবহার করতে পারছেনা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানাগেছে, সেতুটির মূল কাজ শেষ হয়েছে । ২ পাশের ২৫০মিটার সংযোগ সড়ক নির্মান করতে বাকি। কিন্তু সেতুটির দক্ষিন পাশে যেখানে ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মান করতে হবে। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি তাদের নিজেদের জমি দাবী করে কাজে বাধা দেওয়ায় সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মান করা সম্ভাব হয়নি। এলজিইডি বিভাগ জমি বুঝিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে সেতুটির শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভাব।
এলজিইডি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবী, স্থানীয় ৪/৫ জন ব্যাক্তি যে জমি তাদের নিজেদের দাবী করছে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সেতুটির দক্ষিন পাশে যেখানে ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্তত ত্রিশ বছর পূর্বে থেকেই সেখানে (সরেজমিনে) ১৮ মিটার রাস্তা রয়েছে। আর সংযোগ সড়ক করতে ১৮ মিটার জায়গাই প্রয়োজন। ঐ এলাকাতে রেল লাইনে জমি অধিগ্রহন হওয়ায় স্থানীয় এই ৪/৫ জন ব্যাক্তির ধারনা কাজে বাধা দিলে সরকার জমি অধিগ্রহন করে সংযোগ সড়ক করবে আর তারা টাকা পাবে।
ভূমি অফিস সুত্রে জানাগেছে, দীর্ঘদিন যাবৎ এই সড়ক দিয়ে যানবহন চলাচল করতে করতে সড়কটি ১৮ মিটার চওড়া হলেও রেকর্ড অনুযায়ী সেখানে সরকারী জমি (রাস্তা) চওড়া আছে ১০-১২ ফুট। এস এ রেকর্ড অনুযায়ী জমি অধিগ্রহন করে সংযোগ সড়ক করতে হলে ১৫-১৬ শতক জমি অধিগ্রহন করতে হবে। স্থানীয় বাজার অনুযায়ী এই ১৬ শতক জমির মূল্য মাত্র ২ লক্ষ টাকা। অথচ ২ লক্ষ টাকার জমির জন্য ১০ কোটি টাকার সেতু ব্যবহার করতে পারছেনা ভুক্তভোগিরা।
যারা জমির দাবী করছেন তারা কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
স্থানীয় খশরুল শেখ, আলম ও তারিখ শেখ জানান, সেতুটি চালু হলে উপকৃত হবে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। উপজেলার সর্ববৃহত ২টি বাজারের সাথে অত্র এলাকার ব্যাবসায়ীসহ সাধারন মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে। এতে ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে দ্রত সময়ে বাজারজাত করতে পারবে। ফলে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্যেরও সঠিক মূল্য পাবে। এতে উপকৃত হবে ৩২টি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার কৃষক।
এলাকাবাসী জানান, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, জয়পুর, নওয়াগ্রাম, শালনগর ও লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ৮০ হাজারের বেশি মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল গন্ডব এলাকায় তুসখালী দৌয়ার উপর একটি সেতু নির্মানের। সেতুটি নির্মানের দাবী জানিয়ে এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিন যাবৎ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। এলাকার সাধারন মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে স্বপ্নের এই সেতু নির্মান করছে এলজিইডি বিভাগ। অথচ ছোট একটি সমস্যার কারনে সেতুটির সুফল পাচ্ছেনা কেউ। স্থানীয় ব্যাবসায়ী নেতা নজরুল সরদার জানান, সেতুটির ২ প্রান্তে অবস্থিত উপজেলার বৃহত ২টি বাজার । সেতুর ৩ কিলোমিটার উত্তর পাশে রয়েছে লোহাগড়ার বৃহত ব্যানিজ্যিক বাজার মানিকগঞ্জ। আর সেতুর ৩ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত উপজেলার সবচেয়ে বড় এ্যাড়েন্দা হাট। দীর্ঘদিনের পুরাতন এই হাটে আসার জন্য উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মানুষকে সেতুর অভাবে পোহাতে হয়েছে চরম দূর্ভোগ। সেতু না থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হলে কৃষকেরা তাদের কৃষি পন্য দ্রæত সময়ে সহজে বাজারজাত করতে পারবে। এতে কৃষকেরা তাদের পণ্যেরও সঠিক মূল্য পাবেন বলে মনে করেন তিনি। তার দাবী দ্রæত সেতুটির বাকি কাজ শেষ করে সকলের জন্য উন্মোক্ত করে দেয়া হোক।
মানিকগঞ্জ বাজারের ব্যাসসায়ী কিবরিয়া বলেন, তারা প্রতিনিয়ত মানিকগঞ্জ বাজার থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এ্যড়েন্দা হাটে যান। কিন্তু মাঝ পথে গন্ডব এলাকায় সেতু না থাকায় তাদেরকে ১৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে লোহাগড়া হয়ে এ্যড়েন্দা যেতে হয়। এত তাদের পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়। সেতুটি কাজ শেষ হলে তাদের আর এত পথ ঘুরা লাগবেনা।
প্রন্তিক কৃষক তজিবার শেখ বলেন, তিনিসহ এলাকার হাজার হাজার কৃষক দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন প্রকার সজ্বী, ধান, পাট, রবি শস্য, আখ, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করে এ্যড়েন্দা হাটে বিক্রয় করেন। অনেক কষ্ট করে তারা জমিতে ফসল উৎপাদন করলেও সেতুর অভাবে সময় মত সেই ফসল বাজারজাত করতে পারেন না। ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হন তারা। সেতুটি চালু হলে সহজেই তারা তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য বাজারজাত করতে পারবেন এবং তাদের ফসলের নায্য মূল্য পাবেন। গাড়ি চালকরা জানান, সেতুটি চালু হলে তাদের আর ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরে এ্যড়েন্দা হাটে যাওয়া লাগবেনা। খুব সহজেই তারা যাতায়াত করতে পারবে। সেতুর উত্তর পাশে ২ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারসহ সেতুটির কাজ দ্রত শেষ করার দাবী জানান তারা। নড়াইল জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার বলেন, এলাকার মানুষের দির্ঘদিনের চাহিদা ছিল গন্ডব এলাকায় সেতুটি নির্মান করা হোক। স্থানীয় মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এখানে সেতু নির্মান করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, সেতুটির ডিজাইন যখন করা হয় তখন কেউ জমির মালিকানা দাবী করেনি। বর্তমানে যারা কাজে বাধা দিয়ে জমির মালিকানা দাবী করছে, তাদের দাবী অযৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে উপর মহলে চিঠি দেয়া হয়েছে।