নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে টানা ২২ বছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগ করেছেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে তিনি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একই দিন উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ (উখিয়া–টেকনাফ) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইমামুল হাফিজ নাদিমের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নুর আহমদ আনোয়ারী। এ সময় তিনি বলেন, একটানা ২২ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ায় তিনি হোয়াইক্যংবাসীর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তারা যে সম্মান ও ভালোবাসা দিয়েছেন, তা অতুলনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি তাদের কাছে ঋণী এবং ইনশাআল্লাহ নতুন এই যাত্রায়ও অতীতের মতো তারা তাঁর পাশে থাকবেন।
আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আরও বলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কল্যাণে যেভাবে তিনি কাজ করেছেন, ঠিক একইভাবে আরও বৃহৎ পরিসরে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আপামর জনগণের জন্য নিজেকে নিবেদিত করতে চান। এজন্য তিনি সবার দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
২০০৩ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে টানা চার মেয়াদে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নুর আহমদ আনোয়ারী। এটিই তাঁর প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ। প্রথমবার বিএনপির রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যেই তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন তৎকালীন টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মরহুম মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। সাধারণ মানুষের ভোটে তিনি ১ হাজার ১৭৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। পরবর্তী নির্বাচনে মরহুম মোস্তাক আহমেদের ছেলে বিএনপি নেতা জুনাইদ আলিকে তিনি পরাজিত করেন ২ হাজার ৩৩৫ ভোটের ব্যবধানে। তৃতীয়বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরিদুল আলমকে হারান ৩ হাজার ২৭০ ভোটে। চতুর্থবার আওয়ামী লীগের আজিজুল হককে পরাজিত করে টানা চতুর্থবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যেখানে ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৫৫। একটি গ্রামীণ ইউনিয়নে টানা দুই দশকের বেশি সময় ধরে অপরাজিত থাকা শুধু রাজনৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি জনআস্থার প্রতিফলন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
শিক্ষাজীবনেও নুর আহমদ আনোয়ারীর রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। তিনি হ্নীলা শাহ মজিদিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিলে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। রঙ্গিখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান, কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান, হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান এবং চট্টগ্রাম সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে প্রথম স্থান অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি হ্নীলা শাহ মজিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। এছাড়াও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উন্নয়ন ও মানবসেবার মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন নুর আহমদ আনোয়ারী।
বর্তমানে অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া–টেকনাফ) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জেলা বিএনপির সভাপতি, চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনিও ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এই লড়াই সীমান্তবর্তী এই জনপদে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
দীর্ঘ দুই দশকের রাজনৈতিক জীবনে সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও সেবার রাজনীতিকে সামনে রেখে নুর আহমদ আনোয়ারী যে পথ চলেছেন, তা তাঁকে শুধু একজন জনপ্রতিনিধি নয়, একজন মানবসেবক ও আলোকিত অভিভাবক হিসেবেও পরিচিত করেছে।
