হোম অন্যান্যসারাদেশ বন্ধ করা পাটকলসমূহকে চালুসহ খাদ্য, চিকিৎসা ও রেশনিং চালুর দাবিতে মানববন্ধন

বন্ধ করা পাটকলসমূহকে চালুসহ খাদ্য, চিকিৎসা ও রেশনিং চালুর দাবিতে মানববন্ধন

কর্তৃক
০ মন্তব্য 113 ভিউজ

যশোর অফিস :
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের নির্দেশে দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর পাটকল বন্ধ নয় আধুনিকায়ন করা ও পাটকল শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং করোনায় চাকুরিচ্যূত-কর্মহীন শ্রমিক-শ্রমজীবীদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিংয়ের দাবিতে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ যশোর জেলা কমিটির উদ্যোগে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে উদ্যোগে এক শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার দুপুরে সংগঠনের জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সদস্য আতিকুর রহমান জিহাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির জেলা যুগ্ম-সম্পাদক কামরুল হক লিকু, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন যশোর জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ও জাতীয় ছাত্রদল যশোর জেলার অন্যতম নেতা মধু মঙ্গল বিশ্বাস প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এক সময়ে এই দেশের মানুষের দাবির প্রেক্ষাপটে কৃষিজমিতে উৎপাদিত পাটকে ভিত্তি করে গড়েছিলো পাটকল। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর পাটকলসমূহকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রের যথাযথ পরিচালনার পলিসিগত দুর্বলতা, মাথাভারী আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন এবং লুটপাট ও অনিয়মের কারণে এই শিল্পে সংকট দেখা দিলে সেই সংকট দূর করার বদলে অতীত সরকারগুলির আমলে আইএমএফ ও বিশ্ব্যাংকের প্রেসক্রিপসনে প্রথমে ব্যক্তিমালিকানায় কিছু মিল হস্তান্তর এবং পরবর্তীতে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করে দেশীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা জাতীয় শিল্প পাটকল বিক্রির যাত্রা শুরু হয়।

তৎকালীন সময়ে ঐ ঘটনার সমালোচনা করা হলেও অতীত থেকে বর্তমান সময়েও ঐ একই নীতি-নির্দেশনা মেনে চলার কারণে পরিকল্পিতভাবেই এই মিলগুলোকে চুড়ান্তভাবে বন্ধ ও ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করার পথেই হাঁটা হচ্ছে। আর নিজেদের লুটপাট ও ষড়যন্ত্রকে ধামাচাপা দিতে শ্রমিকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পরিত্রাণের অপচেষ্টা কার্যকর করা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের এবং বিশেষজ্ঞদেও পক্ষ থেকে সকল অনিয়ম দূর্নীতি দূরপূর্বক যোগ্যতা, সততা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা কার্যকর করার দাবি করা হয়। একই সাথে মিলগুলি আধুনিকায়ন এবং কর্মরত দক্ষ সকল শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নতুন কারিগরী জ্ঞানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে লাভজনক করার আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তুলে ধরলেও তা আমলে না নিয়ে বাংলাদেশে এসব মিলগুলো পিপিপি-এর মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে ঝুঁকিতে ফেলে কার্যত ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করার পথেই হাটছে সরকার।

আমাদের দেশের এ ধরণের পদক্ষেপের ফলাফল হিসেবে দেখা যায় সম্পদ আত্মসাতের মহাব্যবস্থা হওয়া ছাড়া আর কোন ইতিবাচক ফলাফল আনে না। নেতৃবৃন্দ সরকারের এই ধরণের পদক্ষেপের তীব্রনিন্দা জানান এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে এর চেয়ে কম খরচে মিলগুলিকে আধুনিকায়ন এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে চাকরি অব্যাহত রাখার জোর দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা দেখেছি সরকার ব্যক্তিমালিকানাধীন আমদানিকৃত কাঁচা মালের ভিত্তিতে পরিচালিত নানা শিল্পকে জনগণের টাকায় প্রণোদনা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে চললেও জাতীয় শিল্প হিসেবে পাটশিল্পের যে সম্ভাবনা তাকে আমলে না নিয়ে জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত কার্যকর করে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সংস্থাসমূহের নীতি নির্দেশ ও তাদের দালালপুঁজির মালিকদের মুনাফার স্বার্থে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখছে।

নেতৃবৃন্দ সরকারকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সম্ভাবনাময় ও ঐতিহ্যবাহী জাতীয় স্বার্থের পরিপূরক পাটশিল্প ও এই শিল্পের শ্রমিকদের রক্ষা তথা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আহŸান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনার অজুহাতে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা একদিকে যেমন সকল শ্রমিককে নিয়োগ না দিয়ে কম শ্রমিককে দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, অন্যদিকে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হলেও আগের মজুরি থেকে কম মজুরি দিয়ে শ্রম শোষণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। বক্তারা বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করে বন্ধ পাটকল চালু এবং করোনায় চাকুরিচ্যূত-কর্মহীন শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিংয়ের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন