নিউজ ডেস্ক:
প্লট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের করা পৃথক তিন মামলার রায় পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, শেখ হাসিনা টানা চারবার ক্ষমতায় থেকেও পরিবারসহ অবৈধভাবে প্লট নিয়েছেন। যেটা তার দরকাই ছিল না। কারণ তার স্বামীর নামে গণপূর্তের দেওয়া আলাদা প্লট ছিল; যেটি তিনি গোপন করেছেন। প্লট নেওয়ার জন্য যে হলফনামা দেওয়া হয়েছিল তাতে নোটারি করা ছিল না বিধায় সেই হলফনামা জাল নথি ছিল। অবৈধভাবে বরাদ্দ পাওয়ার পরে আবেদন করেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রায় পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলার রায় পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজউকের বিধিমালা বা কোনও নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলেও জানান আদালত।
আদালত বলেন, শেখ হাসিনাকে ১৬৪ ধারাসহ অনেক সেকসন থেকেই খালাস দেওয়া হয়েছে। শুধু ৪২০ ও ৫/২ ধারাতে সাজা দেওয়া হয়েছে, বাকিগুলোতে তিনি খালাস পেয়েছেন।
আদালত আরও বলেন, সরকারি সম্পত্তিকে ব্যক্তিগত বানিয়ে নিয়েছেন। রাজউকই যদি আইন না মানে তাহলে কে মানবে?
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ৩২ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ক্যাটাগরিতে সরকারের রিকমেন্ড ছাড়া সাংবাদিক-আইনজীবী কেউই প্লট পাবে না।
এ সময় আদালত বলেন, উন্নত রাষ্ট্রে মনে হয় না এমন পদ্ধতি আছে, একমাত্র বাংলাদেশেই আছে এমন অনিয়ম।
রায় শেষে দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান লিপন বলেন, আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা পৃথক তিন মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনাকে সাত বছর করে মোট ২১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে দ্বিতীয় মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাশাপাশি ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মামলাটিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
পৃথক তিন মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৭। তবে ব্যক্তি হিসাবে আসামির সংখ্যা ২৩। প্রথম মামলায় আসামি শেখ হাসিনাসহ ১২ জন, দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন এবং তৃতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জন।
তিন মামলায় রাজউকের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে প্রতিটি মামলায় এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এসব মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রবিবার (২৩ নভেম্বর) রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। তারা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করলে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে দলটি সরকার গঠন করলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। পরে ২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
