হোম খুলনাসাতক্ষীরা সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব

সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 33 ভিউজ
নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও বাহিরে কিছু শিক্ষকের দ্বারা পরিচালিত কোচিং ও ব্যক্তিগত প্রাইভেট টিউশনির মুনাফা এখন অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা প্রক্রিয়ার যোগসাজশ নিয়ে শিক্ষকদের কোচিং ও পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র স্বার্থের ভয়ঙ্কর সংঘাতে পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এর অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশীরভাগ শিক্ষকই ছাত্রীদের নিজের বাসায়, ছাত্রীদের বাসায়, অথবা স্কুলের কোনো কক্ষে কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনি করিয়ে থাকেন। যা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের ন্যায় বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।  যে কারণে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার পবিত্রতা এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারকে ধ্বংস করছে। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলছে, যা শিক্ষার নীতি-নৈতিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। শিক্ষক= প্রশ্ন প্রণেতা=খাতা মূল্যায়নকারী: যে শিক্ষক ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, তিনিই পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করছেন এবং তিনিই সেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য স্বার্থের সংঘাত’। পরীক্ষায় বাড়তি সুবিধা ও অন্যায্য মূল্যায়ন: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্রীরা পরীক্ষার আগে নিশ্চিতভাবে প্রশ্নপত্রের ‘ক্লু’ বা ইঙ্গিত পাচ্ছে। এর ফলে তাদের পরীক্ষার জন্য তুলনামূলকভাবে কম চাপ নিতে হয় এবং তারা প্রকৃত মেধা ও প্রস্তুতি ছাড়াই অন্যদের (যারা প্রাইভেট পড়ে না) চেয়ে অনেক বেশি নম্বর পাচ্ছে।
প্রশ্ন মডারেশনে কারসাজি: প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষকদের কেউ কেউ পরীক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে প্রশ্নপত্র মডারেশন ও মুদ্রণের সময় উপস্থিত থাকেন। অভিযোগ রয়েছে যে, নামমাত্র নিরপেক্ষ শিক্ষকদের প্রণীত প্রশ্ন নেওয়া হলেও ‘মডারেশনের’ নামে মূলত স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের প্রণীত প্রশ্নই বহাল রাখা হয়।
ধারাবাহিক অনিয়মের পুনরাবৃত্তি: বার্ষিক পরীক্ষায় বিতর্কিত শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এই অনিয়মের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকটি হলো, এর ধারাবাহিকতা ও পুনরাবৃত্তি।
গুরুতর আপত্তি: ২০২৫ সালের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় যেসব বিতর্কিত শিক্ষক প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্বের কারণে সমালোচিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই বার্ষিক পরীক্ষার কমিটিতেও পুনরায় সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ন্যায়বিচারের পরিপন্থী: একই শিক্ষাবর্ষে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষার কমিটিতে একই বিতর্কিত শিক্ষকদের বারবার উপস্থিতি, বিশেষ করে যখন তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁস এবং মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে, তা অত্যন্ত আপত্তিকর এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এই পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে যে, পূর্বের অনিয়কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই অনিয়মের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগত ন্যায় বিচার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যে সকল শিক্ষার্থী মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারা বঞ্চিত হচ্ছে এবং অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্ত সুবিধার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারাত্মক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটি শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেকারণে উত্তরপত্র মূল্যায়নে  ‘শিফট বিনিময় /শিফট অদল-বদল’ চেয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দরা।
শিফট ভিত্তিক উত্তরপত্র মূল্যায়ন বিনিময়: প্রভাতী শিফটের (মর্নিং শিফট) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার উত্তরপত্র দিবা শিফটের (দিবা শিফট) শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়ন করানো হোক এবং দিবা শিফটের শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র প্রভাতী শিফটের শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়ন করানো হোক। এই পদ্ধতি কার্যকর করা হলে, যে শিক্ষক প্রশ্ন প্রণয়ন করেছেন বা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, তিনি সরাসরি তার প্রাইভেট পড়–য়া ছাত্রীর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবেন না। এতে করে উত্তরপত্র মূল্যায়নে কিছুটা হলেও নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং মেধার সঠিক মূল্যায়ন হবে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও মেধার সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে এবং স্বার্থের সংঘাত এড়াতে জরুরীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রীর ভবিষ্যৎ ও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে কলুষমুক্ত করতে বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরী হস্তক্ষেপ করে বিতর্কিত শিক্ষকদের পরীক্ষা কমিটি থেকে অপসারণ এবং এই ‘শিফট অদল-বদল’ পদ্ধতি কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন