হোম জাতীয় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করা আর সম্ভব না-জাতিসংঘকে বাংলাদেশ

রোহিঙ্গাদের ভার বহন করা আর সম্ভব না-জাতিসংঘকে বাংলাদেশ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 47 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ভার বাংলাদেশের পক্ষে আর বহন করা সম্ভব নয়। সেজন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ৮০-তম সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গৃহীত এক প্রস্তাব পরবর্তী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য নতুন করে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে এ প্রস্তাব পেশ করেছে। আর ১০৫টি দেশ যৌথভাবে এ প্রস্তাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে গৃহীত এই বার্ষিক প্রস্তাবে রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করা, মানবিক প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ এবং বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অব্যাহত আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততারও আহ্বান জানানো হয়েছে।’

প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানায়। তবে গত আট বছরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের কোনও বাস্তব অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ব্যাপক নৃশংসতার পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে তাদের গণবিতাড়িত হওয়ার এ বছর আট বছর পূর্ণ হয়েছে। প্রতি বছর ক্যাম্পের জনসংখ্যা ৩০ হাজার করে বৃদ্ধি পায়। এরপর নতুন করে সহিংসতার কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। রোহিঙ্গাদের মোট সংখ্যা এখন ১৩ লাখ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কোনো অর্থবহ অগ্রগতি হয়নি এবং একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি। তাই এই রেজোলিউশন আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এবারের আলোচনায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির স্বীকৃতি দেয়। এতে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, মানবিক সহায়তা বাধা এবং লাখ লাখ মানুষকে বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রস্তাবে অবিলম্বে সহিংসতার অবসান, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরন্তর মানবিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অসহযোগিতার কারণে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যে অগ্রগতির অভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রেজুলেশনে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে পর্যায়ক্রমিক উচ্চ পর্যায়ের সংলাপসহ নতুন করে প্রচেষ্টার পাশাপাশি আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ হিসেবে রাখাইনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মানবিক সংগঠনগুলোর উপস্থিতির জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একাধিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন আগতদের কারণে কক্সবাজারের ইতোমধ্যে জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলো আরও ভিড় করে তুলেছে। আমরা আর বোঝা বহন করতে পারছি না। তদুপরি, পরিস্থিতি মানবপাচার এবং অন্যান্য আন্তঃদেশীয় অপরাধের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তাই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রাখাইনে যুক্তিসঙ্গত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অপরিহার্য।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন