হোম অন্যান্যশিক্ষা জানুয়ারিতেই বই দেওয়ার দাবি এনসিটিবির, অনিশ্চয়তা সংশ্লিষ্টদের

জানুয়ারিতেই বই দেওয়ার দাবি এনসিটিবির, অনিশ্চয়তা সংশ্লিষ্টদের

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 40 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে কিছুটা সমস্যা থাকলেও আগামী জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই হাতে পাবেন বলে দাবি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির (বিএমএসএস) নেতারা বলছেন, সরকারের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা থাকলে জানুয়ারিতে পাঠ্যবই দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় জানুয়ারিতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না।

যথাসময়ে পাঠ্যবই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য সম্প্রতি মূদ্রণ মালিকদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি বৈঠক করেছে। জানতে চাইলে এনসিটিবির অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা জানুয়ারিতেই বই দিয়ে দেওয়ার। আর আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’

এনসিটিবি জানায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ট শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপতে প্রথম টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল চলতি বছরের ৪ মে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকের গত ১৮ মে দরপত্র আহ্বান করার পর তা উন্মুক্ত করা হয় গত ১৭ জুন। টেন্ডার আহ্বানের পর প্রাথমিক প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ৩০ জুন এবং চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে ১৫ জুলাই। ষষ্ঠ শ্রেণির বই ২ জুন, সপ্তম শ্রেণির বই ৪ জুন, অষ্টম শ্রেণির বই ২৩ জুন, নবম শ্রেণির বই ২৪ জুলাই এবং ইবতেদায়ির বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে গত ১০ জুলাই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একটি লটের বইয়ের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে গত ১৯ জুন। কিন্তু ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করে পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম চালায় এনসিটিবি।

সঠিক সময়ে পাঠ্যবই ছাপা এবং শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির (বিএমএসএস) সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছোট, কম সময়েই ছাপা হয়ে যাবে। মাধ্যমিক নিয়ে সমস্যা আছে। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ক্রয় অনুমোদন না হওয়ায় মাধ্যমিকের কয়েকটি শ্রেণির কিছু লটের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে দফায় দফায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। আর সে কারণে বই ছাপা কাজে সময় নষ্ট হওয়ায় যথাসময়ে পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সময় নষ্ট হয়েছে। পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ভালো উদ্যোগ নিয়েছিল এনসিটিবি। সরকারের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা থাকলে জানুয়ারিতে পাঠ্যবই দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় জানুয়ারিতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না।’

প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহ কাজে এগিয়ে রয়েছে বলে জানান তোফায়েল খান। আর এনসিটিবি জানায়, নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই ছাপা শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

জানতে চাইলে প্রাথমিকের বইয়ের দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব পাঠ্যই ছাপা শেষ হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বই দেওয়া সম্ভব হবে। আগামী জানুয়ারিতেই প্রাথমিকের সব বই শিক্ষার্থীরা পাবেন।’

এদিকে গত ১০ নভেম্বর ইবতেদায়ি মাদ্রাসা (প্রাথমিক স্তর), মাধ্যমিক স্তরের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ষষ্ঠ, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই মূদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর দরপত্র উন্মুক্ত হলে এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি হলে নির্ধারিত সময় থেকে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু হবে। দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই, মাধ্যমিক বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ট, নবম ও দশম এই দিন শ্রেণির পাঠ্যবই মাত্র দুমাসের কম সময়ে ছাপা এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে অনিশ্চয়তার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা গত ৬ নভেম্বরও একটি চুক্তি করেছি। মূদ্রণ প্রতিষ্ঠান ১২ দিনের মধ্যে বই দিয়েছে। সাব-লটের কাজের রিটেন্ডার (পুনঃদরপত্র) করা হয়েছে। কয়েকটি লটের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। তারা যথাসময়ে বই দিয়ে দেবে।’

মূদ্রণ মালিকদের সঙ্গে সব বই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহের চুক্তি শেষ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবির মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, ‘সব চুক্তি শেষ না হলেও চুক্তির পর যে সময় দিতে হয় সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি না, তাদের (মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান) মোটিভেট করছি চুক্তির সময়ের আগেই যেন বই করে ফেলে। তাদের কিছু সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। বিদ্যুৎ নিয়ে তাদের একটি কনসার্ন ছিল—সেগুলো সমাধান করেছি। আমরা গত পরশুদিন শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিকদের নিয়ে বসেছিলাম। আমদের দিক থেকে যেগুলো করার আছে আমরা করবো।’

মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা প্রসঙ্গে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে পাঠ্যবই দিতে পারবো। ইবতেদায়ির (প্রাথমিক স্তর) অর্ধেক বই ছাপা হয়ে গেছে। এ মাসের ২৫ তারিখের বাকি বই ছাপা হয়ে যাবে। নবম শ্রেণির বই ছাপা শুরু হয়েছে। ৯৭টি প্রেসের মধ্যে ৯২টি প্রেস ছাপা শুরু করে দিয়েছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবমের চুক্তি যদি শেষ করতে পারি তাহলে ৩০ দিনের মধ্যে তারা বই দিতে পারবে। সমস্যা হবে না।’

গত ১০ নভেম্বরে পুনঃদরপত্র আহ্বান কেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান বলেন, ‘কিছু কিছু লটে যোগ্য বিডার না পাওয়ায় রি-টেন্ডার হয়েছে। মাত্র কয়েকটি লটের কাজ, এগুলো অল্প সময়ে অর্ডার হয়ে অল্প সময়ে কাজ হয়ে যাবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালের শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপাবে এনসিটিবি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রায় ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ছাপার কার্যক্রম চলছে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন