হোম খুলনাসাতক্ষীরা সাতক্ষীরায় উপকূলীয় এলাকায় ক্রীড়া উৎসব

সাতক্ষীরায় উপকূলীয় এলাকায় ক্রীড়া উৎসব

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 44 ভিউজ
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে খুব বেশিদিন আগেও খেলাধুলার মাঠ ছিল মেয়েদের জন্য এক অঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকা। লবণাক্ত নদীর পানি, ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়, দারিদ্র্য আর জলবায়ু পরিবর্তনের কঠোর বাস্তবতায় যখন মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমে ক্ষয়ে যাচ্ছিল, তখন মেয়েদের অবস্থান সীমাবদ্ধ ছিল ঘরের চার দেয়ালের ভেতরে। ঘরের কাজ, স্কুলছুট হয়ে যাওয়া ও অকালবিয়ের চাপ ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। খেলাধুলার মাঠ তাদের কাছে ছিল সামাজিক বাধা ও নীরব তিরস্কারের প্রতীক মেয়ে মানুষ আবার খেলতে যাবে কীভাবে? এমন প্রশ্ন অসংখ্য স্বপ্নকে থামিয়ে দিত শুরু হওয়ার আগেই।
এই বাস্তবতাকে বদলে দিতে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, টেরে দে জোম ফাউন্ডেশন, এসডিসি এবং অলিম্পিক রিফিউজ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় শোভনালী ইউনিয়নের গোদাড়া ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় একটি রূপান্তরমূলক ক্রীড়া উৎসব। ‘এসপি’রিট (Sports for Protection, Resilience and Transformation)’ প্রকল্পের অধীনে কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত ক্রীড়া সেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরার পাঁচটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে গত চার মাসে ২৭০০ কিশোর-কিশোরী (১৩৫০ ছেলে ও ১৩৫০ মেয়ে) ১৮০টি দলে অংশগ্রহণ করেছে। ‘ফুটবল ফর প্রোটেকশন কারিকুলাম গাইড ও ‘ট্র্যাডিশনাল গেমস গাইড’ এর ভিত্তিতে ১৮টি সেশনের মাধ্যমে তারা গড়ে তুলেছে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ জীবনদক্ষতা,বিশ্বাস গঠন, সহযোগিতা, যোগাযোগ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সৃজনশীল চিন্তা ও দায়িত্বশীলতা।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল হাঁড়িভাঙা, ঐতিহ্যবাহী খেলা এবং কিশোর ও কিশোরীদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ফুটবল ম্যাচ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আশাশুনি উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, শোভনালী ইউনিয়ন জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধিতা, বেকারত্ব, জলাবদ্ধতা ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও প্রকল্পটি প্রান্তিক শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ খেলাধুলার ক্ষেত্র তৈরি করছে। ভবিষ্যতে মাঠ, স্পোর্টস ক্লাব ও অন্যান্য সুবিধা উন্নয়নে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।
মূল বক্তা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও সাবেক রেফারি  ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান তিনি বলেন, যারা মাঠে খেলা শিখে, তারা জীবনে কখনো হার মানে না। এসপি’রিট প্রকল্প ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য মাঠ উন্মুক্ত করেছে, ভয়ভীতির দেয়াল ভেঙে তাদের আত্মবিশ্বাস ও পরিচয় গড়ে তুলছে। ভবিষ্যতে যদি কোনো শিশু ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি আমি দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন শোভনালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক। এছাড়া সামাজিক সেবা, যুব উন্নয়ন, মাধ্যমিক শিক্ষা ও মহিলা বিষয়ক দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটি সদস্য, সাংবাদিক সহ আরো অনেকে। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আশাশুনি উপজেলা কোঅর্ডিনেটর দিপ রঞ্জন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে কিশোর-কিশোরীরা নেতৃত্ব দিয়ে প্রদর্শনী স্টল সাজায়, যেখানে তারা কমিউনিটি ম্যাপিং, সমস্যা নিরূপণ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন