হোম জাতীয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ পর্যন্ত তিনবার ‘সেফ এক্সিট’ ঘটেছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ পর্যন্ত তিনবার ‘সেফ এক্সিট’ ঘটেছে

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 76 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সেফ এক্সিট’ শব্দটি হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা এ নিয়ে ভাবছেন—এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের এমন মন্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থামছেই না।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধারণা নতুন নয়। গত ৫৪ বছরে অন্তত তিনবার বড় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় ‘সেফ এক্সিট’-এর ঘটনা ঘটেছে।

রাজনীতিতে সেফ এক্সিট বলতে সাধারণত এমন এক পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়, যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নানা অভিযোগ বা রাজনৈতিক চাপে পড়েও জবাবদিহির বাইরে থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ পান। দেশের জটিল রাজনৈতিক সংকট মেটাতে বা সংঘাত এড়াতে প্রভাবশালী পক্ষগুলোর মধ্যে এমন সমঝোতা হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেফ এক্সিট সাধারণত ক্ষমতাসংক্রান্ত টানাপোড়েন ও সংঘাত এড়াতে দেওয়া হয়। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তি যেমন নিরাপদে সরে যান, তেমনি ক্ষমতাসীন বা নতুন শাসকরাও তাৎক্ষণিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চলে গেলে সেও নিরাপদ থাকলো, আমরাও ঝামেলামুক্ত থাকলাম। ব্যাপারটা এই রকম যে একজন দুর্বৃত্ত, একজন গণশত্রু পালালেন, কিন্তু তাকে সাহায্য করা হলো পালাতে। যারা এই সাহায্য করলেন, তারাও একই গোয়ালের গরু।’

পরিবারের সদস্যসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাথে যুক্ত সেনা সদস্যরা

বাংলাদেশে প্রথম সেফ এক্সিটের ঘটনা ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হত্যার পর।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনা সদস্যদের বিচার না করে সে সময় ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এমনকি পরবর্তীতে কয়েকজনকে বিদেশে কূটনৈতিক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, অপরাধ সংঘটনের পরও বিচারের বাইরে থেকে নিরাপদে বিদেশে পাঠানোর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো ‘সেফ এক্সিট’-এর নজির সৃষ্টি হয়।

ফখরুদ্দীন আহমদ

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তখন গ্রেপ্তার হন দুই প্রধান দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে থাকে।

২০০৮ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতির সময় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা। তখনই তারা ‘এক্সিট প্ল্যান’ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এক-এগারোর কুশীলবরা একটা সেফ এক্সিটের জন্য ধর্না দিয়েছিল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কাছে। খালেদা জিয়া দেন নাই, সেটা হাসিনা দিয়েছেন।’

তার ভাষ্য অনুযায়ী, সেনা কর্মকর্তারা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় নিউইয়র্কে থাকা সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ টেলিফোনে বৈঠকে যুক্ত হন।

অবশেষে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতা নবনির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় সেফ এক্সিট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেফ এক্সিটের শেষ উদাহরণ শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে তৃতীয় সেফ এক্সিটের ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, তাকে দেশ ছাড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তিনি তো প্রাণে বাঁচলেন, সেই অর্থে এটা সেফ এক্সিট। কারণ তিনি গোপনে পালান নাই; সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সামরিক বাহিনীর বিমানে করে তাকে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন