হোম আন্তর্জাতিক ভারত সফরে যাবেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারত সফরে যাবেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 47 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আগামী বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভারত সফরে যাচ্ছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। ২০২১ সালে দেশটির শাসনক্ষমতা তালেবানের দখলে যাওয়ার পর এটিই দুদেশের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। ফলে দিল্লি-কাবুলের মধ্যে ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নিশ্চিত করেছে যে, মুত্তাকিকে সাময়িকভাবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লি সফর করতে পারবেন।

ভারতীয় কূটনৈতিক মহল দীর্ঘদিন ধরেই এ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জে.পি. সিংহ একাধিকবার মুত্তাকি ও অন্যান্য তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যার বেশিরভাগই দুবাইয়ের মতো নিরপেক্ষ স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা, স্বাস্থ্য খাত শক্তিশালীকরণ এবং শরণার্থী পুনর্বাসন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে ভারত।

তবে গত ১৫ মে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সিঁদুর অভিযানের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও একটা মোড় নেয়। সে দিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর মুত্তাকির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন—২০২১ সালের পর যা ছিল প্রথম মন্ত্রীপর্যায়ের যোগাযোগ।

আলাপচারিতায় জয়শঙ্কর তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর প্রশংসা করেন এবং আফগান জনগণের সঙ্গে ভারতের ‘ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব’ পুনর্ব্যক্ত করেন।

এর আগে এপ্রিলে, পাকিস্তানি মদদে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেয় তালেবান। এই অভিন্ন অবস্থান দুই পক্ষের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়।

এর পর থেকে ভারত-আফগানিস্তানে সরাসরি মানবিক সহায়তা জোরদার করেছে—খাদ্যশস্য, ওষুধ এবং উন্নয়ন সহায়তা পাঠিয়েছে। তালেবান প্রশাসনও ভারতের কাছে জ্বালানি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সহযোগিতা চেয়েছে। সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ভারত দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেয়, যার মধ্যে ছিল এক হাজার তাঁবু, ৩৬ টনের বেশি খাদ্য, ওষুধ, কম্বল ও জেনারেটর। এর বাইরে গত তিন বছরে ভারত প্রায় ৫০ হাজার টন গম, ৩৩০ টনের বেশি ওষুধ ও ভ্যাকসিন এবং কীটনাশক সরবরাহ করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সফর পাকিস্তানের জন্য বড় ধাক্কা। কাবুলে দীর্ঘদিন প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করলেও পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবান সরকারের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়েছে, বিশেষত আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর পর। ফলে ভারতকে আরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ভারতের জন্য এ সফর ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তালেবান সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে তোলা ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, আঞ্চলিক সন্ত্রাসী হুমকি প্রতিরোধে সহায়তা করবে এবং পাকিস্তান ও চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন