হোম অন্যান্যসারাদেশ সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ‘সন্ত্রাসী’ বললেন ম্যাজিস্ট্রেট

সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ‘সন্ত্রাসী’ বললেন ম্যাজিস্ট্রেট

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 62 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সময় তিনি এ কথা বলেন। এ ঘটনার একটি আংশিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

রবিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে মহালয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে মহালয়া উপলক্ষে শতাধিক যাত্রী বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় ৭১ পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নৌকাডুবির তিন বছর পূর্তি ও বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। সে সময় করতোয়া নদীর ঘাটে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান সাংবাদিকদের নদী পার হতে বাধা দেন। ওই সময়ে নদীতে তিন থেকে চারটি নৌকা চলাচল করছিল এবং নৌকায় মোটরসাইকেলও পারাপার হচ্ছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা নৌকায় উঠতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলেন, মোটরসাইকেল নেওয়া যাবে না।

তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন– ‘যখন অন্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে পার হচ্ছে, আমরা কেন নিউজের কাজে যেতে পারবো না?’ এতে তাহমিদুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আল জাজিরা, বিবিসি বাংলা আর আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হোন আর যেই সাংবাদিক হোন, তাতে আমার যায় আসে না। যেতে পারবেন না।’ তার এমন আচরণ সাংবাদিকরা ক্যামরায় ধারণ করলে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে আরও অশালীনভাবে বলেন, ‘আপনারা সন্ত্রাসী।’

শতাধিক লোকের সামনে সাংবাদিকদের এভাবে অপমানিত করার ঘটনায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি নূর হাসান বলেন, ‘আমরা মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করেন। ঘাট একবারে ফাঁকা ছিল এবং অন্য ব্যক্তিদেরও যেতে দেখা যায় মোটরসাইকেল নিয়ে নৌকা পারাপার হতে। ইউএনও নিজেও নৌকায় করে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাট পারাপার হচ্ছিলেন। তাহলে সাংবাদিকদের যেতে বাধা কেন?’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মহালয়ার পূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন এবং নদী পারাপারে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে ডিউটিরত ছিলাম। নৌকায় মোটরসাইকেল এবং অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না ওঠে এ জন্য বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে আমাদের বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি সাংবাদিকদের চিনতাম না। তারা হঠাৎ করে নৌকায় ৪-৫টি মোটরসাইকেল তুলে ফেলেন। এ ব্যাপারে আইন এবং আমাদের নির্দেশনার কথা বারবার বললেও তারা কোনও কথা শোনেননি। একসঙ্গে সবাই আমার দিকে ক্যামেরা ধরে একনাগাড়ে কথা বলতে থাকেন। আমাকে বলার কোনও সুযোগই দেননি। আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই। আমি ভাষাগতভাবে হয়তো ভুল শব্দ প্রয়োগ করেছি, কিন্তু আমি সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী মনে করি না। আমি বলতে চেয়েছি মব সন্ত্রাসের কথা।’

এদিকে, ঘটনার সময় বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সাংবাদিকরা তাকে বিষয়টি জানান। তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী সাংবাদিকদের জানান, ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে আউলিয়ার ঘাটের সার্বিক কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন