হোম আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কি তুরস্ক?

ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কি তুরস্ক?

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 107 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন যখন নতুন মাত্রা পেয়েছে তখন প্রশ্ন উঠেছে, ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কি তুরস্ক? সম্প্রতি কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর থেকেই ইসরায়েলপন্থি ভাষ্যকাররা তুরস্ককে নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য শুরু করেছেন। ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী থিংক ট্যাংক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন সতর্ক করে বলেছেন, তুরস্ক ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে এবং ন্যাটোর সদস্যপদ তুরস্ককে সুরক্ষা দেবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি শিক্ষাবিদ মেইর মাসরি লিখেছেন, আজ কাতার, কাল তুরস্ক। এর জবাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কঠোর ভাষায় বলেছেন, ইসরায়েলি জায়নবাদের কুকুর… খুব শিগগিরই বিশ্ব তোমাকে মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাবে।

বেশ কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলপন্থি সংবাদমাধ্যমগুলো তুরস্ককে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। তারা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের অবস্থান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার পুনর্গঠনে আঙ্কারার ভূমিকাকে ‘নতুন উদীয়মান বিপদ’ হিসেবে দেখছে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো ওমর ওজকিজিলচিক বলেছেন, আঙ্কারা এই ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে, কারণ তারা মনে করে ইসরায়েল আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির কারণে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গত আগস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেন। সম্প্রতি কাতারে ইসরায়েলি হামলা তুরস্কের মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দেহ বাড়িয়েছে। কারণ কাতার যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল তার ওপর হামলা চালিয়েছে এবং ওয়াশিংটনের কোনও দৃশ্যমান প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই তার দেশের আঞ্চলিক সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্যের কথা বলছেন। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, ইসরায়েলের ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ভিশনের লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর এবং বিশেষ করে ইসরায়েলের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত করে রাখা।

গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ইয়েমেন ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে এবং তিউনিসিয়ায় গাজার ত্রাণবহরেও হামলার অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্লেষক ওজকিজিলচিক বলেন, এই প্রেক্ষাপটে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে। তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য একটি দুর্বল, খণ্ডিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যা তুরস্কের শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র গঠনের নীতির পরিপন্থি।

অবসরপ্রাপ্ত তুর্কি অ্যাডমিরাল জেম গুর্দেনিজ বলেছেন, তুরস্ক-ইসরায়েলের সংঘাতের প্রথম লক্ষণ সম্ভবত সিরিয়ার স্থল ও আকাশসীমান্তে দেখা যাবে। তিনি আরও বলেন, সাইপ্রাসে ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা উপস্থিতি গ্রিস ও গ্রিক সাইপ্রাস প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আঙ্কারা এটিকে ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ (তুরস্কের সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব) ভাঙার এবং আটকে রাখার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

ইসরায়েল তার নিজের নিরাপত্তার জন্য একটি খণ্ডিত সিরিয়া চায়, যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। অন্যদিকে, তুরস্ক একটি কেন্দ্রীভূত ও ঐক্যবদ্ধ সিরীয় প্রশাসনকে সমর্থন করে। এই দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সিরিয়ায় তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি সিরিয়ার হোমস প্রদেশ এবং হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দরে সম্ভাব্য সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য তুরস্ক যখন সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করছিল, তখন ইসরায়েল ওই স্থানগুলোতে বোমা হামলা চালায়।

আঙ্কারাভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেটা’র পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা পরিচালক মুরাত ইয়েসিলতাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই আঞ্চলিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের চেষ্টায় বিভিন্ন বিপদ ও ঝুঁকি বয়ে আনছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে বিভাজন আরও গভীর করছে।

ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিরাপত্তা থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ (আইএনএসএস) সতর্ক করে বলেছে, তুরস্ক ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-এর মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া সিরিয়ায় কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। এটি আঙ্কারাকে দক্ষিণ সিরিয়ায় তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দেবে, যা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, ইসরায়েলের হুমকি কোনও প্রচলিত সামরিক আগ্রাসন নয়, বরং পরোক্ষ উপায়ে তুর্কি স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করা। তুরস্কের উচিত তার কৌশলগত প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষ করে বিমান প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা সক্ষমতা জোরদার করা। এছাড়া, কাতার, জর্ডান এবং ইরাকের সঙ্গে আঞ্চলিক জোট গঠনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত, যাতে তুরস্ক সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন না হয়।

এই মুহূর্তে, উভয়পক্ষই সংঘাতের ঝুঁকির বিষয়টি উপলব্ধি করছে। তবে ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির কারণে তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। আঙ্কারা মনে করে, যদি তেল আবিব এই পথেই চলতে থাকে, তাহলে আঙ্কারা ও তেল আবিবের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে।

সূত্র: আল জাজিরা

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন