হোম খেলাধুলা সেই লঙ্কানদেরই আজ হারানোর আশা

সেই লঙ্কানদেরই আজ হারানোর আশা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 44 ভিউজ

স্পোর্টস ডেস্ক:
এশিয়া কাপ মানেই আবেগ, অনিশ্চয়তার রং মাখা ক্রিকেট। বাংলাদেশের জন্য এবারের আসরও আলাদা কিছু নয়। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের হার লিটন কুমার দাসদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ম্লান করে দিয়েছিল। তবে সুপার ফোরের সমীকরণ যখন জটিল হয়ে উঠেছিল, তখনই ভাগ্য নতুন করে দুয়ার খুলে দেয়। আফগানিস্তানকে হারিয়ে শুধু নিজেদের পথেই নয়, বাংলাদেশেরও সুপার ফোরের পথ সুগম করে দেন লঙ্কানরা।

ভাগ্যের সেই সহযাত্রী আজকেই প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে আজ রাত সাড়ে ৮ টায় সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে শ্রীলঙ্কা এক বিশেষ অধ্যায়ের নাম। নিদহাস ট্রফি থেকে শুরু করে এশিয়ার নানা মঞ্চে লঙ্কানদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সবসময়ই রঙিন আবেগ ছড়িয়েছে। প্রতিটি ম্যাচে, প্রতিটি মুহূর্তে দুই দলের লড়াই হয়ে উঠেছে নিছক ক্রিকেটের বাইরে আরেকটি প্রতিযোগিতা- অহংকার আর মর্যাদার লড়াই। এবারের এশিয়া কাপেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যাদের কারণে টাইগাররা টিকে আছেন লড়াইয়ে, সেই দলকেই হারানোর স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামছেন লিটন কুমরা দাসরা।

দুবাইয়ের রাত তাই শুধু একটা ক্রিকেট ম্যাচের নয়, এক প্রতিশোধের আখ্যান। গ্রুপ পর্বে যে হার তাদের পথ কঠিন করে তুলেছিল, সেই ব্যথা আজও রয়ে গেছে প্রতিটি সমর্থকের মনে। আজ জয়ের মধ্য দিয়েই সেই ক্ষত সারাতে চাইবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে সুপার ফোরের শুরুটা দারুণভাবে রাঙাতে চাইছে দল। লাল-সবুজের পতাকা হাতে যারা আবুধাবির গ্যালারিতে লঙ্কানদের জয়ে করতালি দিয়েছেন, আজ তাদের হৃদয়ও গর্জে উঠবে বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে। প্রবাসী সমর্থকেরা গ্যালারি মাতাবেন, সামাজিক মাধ্যমে ঢেউ তুলবেন, সবার চোখেই এক স্বপ্ন-লঙ্কানদের হারিয়ে নতুন গল্প লেখা।

তবে সহজ হবে না এ লড়াই। শ্রীলঙ্কা সবসময়ই বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। তাদের ব্যাটিং কোচ থিলিনা কানদাম্বি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন-বাংলাদেশকে তারা হালকাভাবে নিচ্ছে না। গত ছয় মাস ধরে লিটনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলছেন, কিন্তু লঙ্কানরা তাদের শক্তি-দুর্বলতা সবই ভালো করে জানেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই জয়ের আশা করছেন তারা। এই সতর্কবার্তাই প্রমাণ করে, লঙ্কানরা জানে বাংলাদেশের হুমকি কতটা বাস্তব।

বাংলাদেশও কিন্তু প্রস্তুত। গ্রুপ পর্বের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার নতুন কৌশল সাজিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। লিটনের নেতৃত্বে দল জানে, আরেক বার একই ভুল করলে সেটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় শুধু প্রতিশোধ নয়, এটি হবে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি। সুপার ফোরে এগিয়ে যেতে হলে আজকের ম্যাচটাই হতে পারে টার্নিং পয়েন্ট।

এশিয়া কাপসহ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে বাংলাদেশ বরাবরের মতোই নানা সমীকরণে বেঁচে আছে। কখনো প্রতিপক্ষের ফলাফলের কারণে, কখনো নিজেদের জয় দিয়ে। এবারের আসরেও ঠিক তাই ঘটেছে। আফগানদের বিপক্ষে লঙ্কানদের জয় যেন ভাগ্যের হাত ধরে বাংলাদেশকে তুলেছে সেরা চারে। কিন্তু ভাগ্য বারবার সহায় করলেও সেটিকে কাজে লাগানোই আসল পরীক্ষা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস সাক্ষী, তারা অনেক সময়ই সুযোগ পেয়েও সেই সুবর্ণ দরজা পার হতে পারেনি। আজকের ম্যাচ তাই ভাগ্যকে কাজে লাগানোর সবচেয়ে বড় উপলক্ষ্য।

তবে ম্যাচকে ঘিরে আবেগ যতই থাকুক, মাঠের লড়াইয়ের কঠিন বাস্তবতাই শেষ কথা বলবে। ব্যাট হাতে লিটন, তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, জাকের আলী অনিকরা দায়িত্ব থাকবেন ইনিংসকে পথ দেখানোর। বোলিং আক্রমণে পেসাররা শুরুতেই চাপ সৃষ্টি করতে চাইবে, স্পিন বিভাগ চাইবে মাঝের ওভারে লঙ্কানদের আটকে দিতে। লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং আর ধারাবাহিক ফিল্ডিং অপরিহার্য।

প্রবাসী সমর্থকদের কাছে এই ম্যাচ তাই এক উৎসব। আফগানদের বিপক্ষে আবুধাবিতে যেভাবে লঙ্কানদের জয়ে তারা আনন্দ করেছে, দুবাইতে তার সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য দেখা যাবে। গ্যালারিতে লাল-সবুজের ঢেউ তুলবে, প্রতিটি ছক্কা-চারে দুলবে পতাকা, প্রতিটি উইকেটে ভেসে আসবে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনি। সেই আবেগে অনুপ্রাণিত হয়েই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে চান টাইগাররা। লঙ্কানদের হাত ধরে যেভাবে বাংলাদেশ এসেছে সুপার ফোরে, আজ সেই হাতকেই থামিয়ে দিতে চায় লাল-সবুজ। ক্রিকেটের সব অনিশ্চয়তা ছাপিয়ে একটাই প্রশ্ন-বাংলাদেশ কি পারবে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে? উত্তর মিলবে দুবাইয়ের আলোয়, যখন গল্পের আখ্যানে লেখা হবে লড়াইয়ের নতুন অধ্যায়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন