হোম অন্যান্যশিক্ষা ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত দাখিল-আলিম মাদ্রাসার অনুমোদন দেবে সরকার

ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত দাখিল-আলিম মাদ্রাসার অনুমোদন দেবে সরকার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 56 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা, কিংবা পৌরসভা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেবে সরকার।

১৯৯৭ সালের ‘বেসরকারি উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) স্থাপন, চালু ও স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা, ১৯৯৭’ সংশোধন করে নতুন করে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার বিধান যুক্ত করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ নতুন নীতিমালা সম্প্রতি জারি করেছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে ক্যাটাগরি আছে—একটি হলো সরকারি, একটি বেসরকারি এবং একটি প্রাইভেট মাদ্রাসা। প্রাইভেট অনেক মাদ্রাসা আছে—যারা অন্য মাদ্রাসার (অনুমোদিত) নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা স্বনামে পরীক্ষা দিতে পারবে (অনুমোদন পাওয়ার পর)। যেহেতু তারা কন্ট্রিবিউট করছে, সেখানে সরকারের আর্থিক ব্যয় নেই। অথচ তারা ভালো পারফর্ম করছে, সে জন্য দেওয়া। তবে তাদের শর্ত দিয়ে দেবো যে—এত দিনের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।’

যদিও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার শর্তের বিষয়টি সংশোধিত নীতিমালায় উল্লেখ নেই। দেশে কতগুলো মাদ্রাসা আছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক আরও বলেন, ‘নিবরাস মাদ্রাসা আছে, তানযীমুল উম্মা এসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশব্যাপী অনেক মাদ্রাসা রয়েছে।’

১৯৯৭ সালের নীতিমালায় ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার বিধান ছিল কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে ছিল না, আমরা সংশোধন করেছি।’

ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা অনুমোদন

সংশোধিত নতুন নীতিমালায় বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা, পৌরসভায় ভাড়া বাড়িতে ন্যূনতম ছয় বছরের চুক্তিপত্র থাকলে দাখিল বা আলিম মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান, স্বীকৃতি দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসার নামে ব্যাংকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার ডিপোজিট থাকতে হবে। মাদ্রাসাটি কোনও ব্যক্তি বা কোনও প্রতিষ্ঠান বা ট্রাস্ট বা মিশন বা এনজিও বা ফাউন্ডেশন বা দাতব্য সংস্থা পরিচালিত হতে পারবে।’

মাদ্রাসা স্থাপন

সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় মাদ্রাসা স্থাপনের শর্তে বলা হয়, ‘এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসার দূরত্ব হবে দাগের ক্ষেত্রে এক কিলোমিটার এবং আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে সেটা দুই কিলোমিটার। আর মফস্বল এলাকার জন্য দাখিল মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এই দূরত্ব ২ কিলোমিটার এবং আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে হবে তিন কিলোমিটার।’

মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির ক্ষেতে শর্ত শিথিল করার বিধান রাখা হয়েছে নীতিমালায়। দাখিল মাদ্রাসার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে—‘যে এলাকায় একটি মাদ্রাসা স্থাপন করা হবে, সেই এলাকায় ১০ হাজার জনগোষ্ঠী থাকতে হবে। আর আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠী থাকতে হবে ৪০ হাজার।’

নীতিমালা অনুযায়ী, দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে প্রথম থেকে দশম, ষষ্ঠ থেকে দশম এবং নবম থেকে দশম শ্রেণির মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়া হবে। আর আলিম মাদ্রাসায় শ্রেণিগুলো হচ্ছে—ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ, নবম থেকে দ্বাদশ, নবম থেকে দ্বাদশ এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি রয়েছে।

পাঠদান অনুমোদনের বিষয়ে দাখিল সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে ন্যূনতম শিক্ষার্থী হবে গড়ে ২৫ জন এবং দাখিল বালিকা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে ন্যূনতম শিক্ষার্থী হবে গড়ে ২০ জন। আলিম সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে ন্যূনতম শিক্ষার্থী হবে গড়ে ৩০ জন এবং আলিম বালিকা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে ন্যূনতম শিক্ষার্থী হবে গড়ে ২৫ জন।

শর্ত শিথিল

নীতিমালায় বলা হয়, ‘মাদ্রাসা শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়ার অনুমতির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা এবং শিল্প এলাকার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বিবেচনায় ৫০ শতাংশ শর্ত শিথিল করা যাবে। তবে সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে মাদ্রাসা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যাবে না।’

এক নজরে দেশে মাদ্রাসা পরিস্থিতি

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) সংখ্যা ৩ হাজার ৪৩৩টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি। এমপিওভুক্ত এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৪৩১ জন।

দাখিল মাদ্রাসার (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) সংখ্যা ৬ হাজার ৫৯৩টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত ৫ হাজার ৩৭১টি। এসব মাদ্রাসায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন৭০ হাজার ৯৮২ জন।

দেশে বর্তমানে আলিম মাদ্রাসার (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৮টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত ৯৮২টি। এসব মাদ্রাসায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন ২০ হাজার ৮১ জন।

কামিল মাদ্রাসার (মাস্টার্স/স্নাতকোত্তর) সংখ্যা ২১৯টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত ১৪৫টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন ৫ হাজার ৭৯ জন।

এছাড়া বর্তমানে সব স্তরে এমপিওবিহীন মাদ্রাসা রয়েছে ১ হাজার ৭৩০টি। এমপিও ও নন-এমপিও এসব মাদ্রাসা সরকারের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন