হোম আন্তর্জাতিক ভারতের নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হলো নতুন দুই রণতরী

ভারতের নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হলো নতুন দুই রণতরী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 45 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের নৌবাহিনীর বহরে আইএনএস হিমগিরি ও আইএনএস উদয়গিরি নামের দুটি রণতরী যুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে ওই দুই রণতরীকে নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি নীলগিরি-ক্লাসের স্টিলথ রণতরী দুটি প্রোজেক্ট ১৭ আলফার (পি-১৭এ) অংশ।

এর আগে, চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশটির নৌবাহিনীর বহরে প্রথম রণতরী আইএনএস নীলগিরিকে যুক্ত করা হয়। হিমগিরি ও উদয়গিরি রণতরী প্রায় পুরোপুরি দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর। এই রণতরীর ৭৫ শতাংশের বেশি সরঞ্জাম দেশে উৎপাদিত বলে দেশটির নৌবাহিনী জানিয়েছে।

এনডিটিভি বলেছে, ভারতে প্রথমবারের মতো দুটি জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা রণতরী একসঙ্গে কমিশন করা হয়েছে। দেশটির পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ও মুম্বাইয়ের মাজাগন ডক শিপবিল্ডার্স ওই দুটি রণতরী তৈরি করেছে। দেশটির একাধিক সামরিক সূত্র বলেছে, নৌবাহিনীর অস্ত্রের বহরে একসঙ্গে দুই রণতরীর কমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতা ও প্রধান প্রতিরক্ষা কারখানাগুলোর পারস্পরিক সমন্বয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।

দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, নৌবাহিনীর বহরে নতুন করে দুটি রণতরী যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে ভারত তিনটি ফ্রিগেটের একটি স্কোয়াড্রন পেল। এর মাধ্যমে দেশীয় শিল্প, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আর আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য ফুটে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

রণতরী উদয়গিরি ও হিমগিরিতে উন্নত প্রযুক্তির নকশা, স্টিলথ, অস্ত্র ও সেন্সর ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। এসব রণতরীর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ নৌ মিশন পরিচালনা করতে পারবে দেশটির নৌবাহিনী। নতুন দুই রণতরীর কমিশনের মাধ্যমে নৌবাহিনীর যুদ্ধ-প্রস্তুতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেশটির সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

দেশটির সামরিক সূত্রগুলো বলেছে, নীলগিরি-ক্লাসের রণতরী উদয়গিরি অত্যন্ত কম সময়ে নির্মাণ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে কমিশন করা হয়েছে। ভারতীয় কারখানার গ্রহণ করা মডুলার নির্মাণ পদ্ধতির কারণে দ্রুততম সময়ে এই কমিশন সম্ভব হয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরীর নকশাকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরোর (ডব্লিউডিবি) ১০০তম নকশাকৃত রণতরী আইএনএস উদয়গিরি। ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে তিন দশকেরও বেশি সময় নিয়োজিত থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া রণতরীর নামে ওই দুই রণতরীর নামকরণ করা হয়েছে। কমিশনের পর এই দুই ফ্রিগেট ভারত মহাসাগর অঞ্চলে দেশটির সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় নিযুক্ত নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় নৌবহরে যোগ দেবে বলে জানানো হয়েছে।

আইএনএস হিমগিরি ও আইএনএস উদয়গিরির প্রত্যেকটির পি-১৭এ ফ্রিগেটের ওজন প্রায় ৬ হাজার ৭০০ টন।

• আইএনএস উদয়গিরি
• মুম্বাইয়ের মাজাগন ডক শিপবিল্ডার্স নির্মিত
• দৈর্ঘ্য ১৪৯ মিটার, সর্বোচ্চ গতি ২৮ নট (প্রায় ৫২ কিলোমিটার/ঘণ্টা)
• অস্ত্র : ৪৮টি বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র ও ৮টি ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র
• একসঙ্গে ২টি হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম
• ডিজেল ইঞ্জিন ও গ্যাস টারবাইনচালিত

• আইএনএস হিমগিরি
• কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স নির্মিত
• উদয়গিরির মতো একই দৈর্ঘ্য, ওজন ও গতি
• দুটি হেলিকপ্টার বহন করতে পারে
• অস্ত্র : ৩২টি বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র ও ৮টি ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র

উভয় জাহাজেই অতিরিক্ত অস্ত্র হিসেবে ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠে নিক্ষেপযোগ্য সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, মাঝারি পাল্লার স্থল থেকে আকাশে নিক্ষেপের ক্ষেপণাস্ত্র, ৭৬ মিলিমিটার এমআর বন্দুক, ৩০ মিলিমিটার ও ১২ দশমিক ৭ মিলিমিটার ক্লোজ-ইন অস্ত্র ব্যবস্থা এবং সাবমেরিন-বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে।

• ইন্দো-প্যাসিফিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কী করবে?
দেশটির সংবাদমাধ্যমে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে চীনের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক সম্প্রসারণ ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতির আওতায় পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দর, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা এবং জিবুতিতে ঘাঁটি গড়ে তুলেছে চীন। এ অবস্থায় নীলগিরি ক্লাসের রণতরীগুলো ভারতের জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।

দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, এসব ফ্রিগেট কেবল সমুদ্রপথে বাণিজ্য রক্ষা নয়; বরং মালাক্কা প্রণালী থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের নৌ উপস্থিতিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।

সূত্র: এনডিটিভি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন