মোস্তফা কামাল:
বর্ষ আসলেই ভাঙ্গতে শুরু হয় নড়াইলের কালিয়া নবগঙ্গা নদী । এবারো একই চিত্র কালিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী ফসলিজমি,ঘরবাড়ি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা । ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিণ হয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি। চোখের পলকেই স্বপ্ন নদীতে বিলিণ হয়ে যায়। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থকে না। এতে পাল্টে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কালিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার। তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার ভুক্তোভোগী মানুষ।
সরেজমিনে জানা যায় ,গত কয়দিনের বর্ষণে নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং স্রোত বেড়ে যাওয়ায় কালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া, মাহাজন বাজার, বড়দিয়া নৌবন্দর বাজার,গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাতযাপন করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর ও কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। নদীগর্ভে চলে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসতভিটা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভেড়িবাধের ওপর নির্মিত সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে আশপাশের গ্রামের শত শত একর ফসলী জমি। ভেসে যাবে কয়েকশ মাছের ঘের।
কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রামের বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগমসহ ২০টি পরিবারের বাড়ীঘর,ফসলি জমি নদীতে বিলীণ হয়েছে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে ৬০টি পরিবার। বাচ্চু শেখ,পান্নু শেখ,শামু শেখ,লিপি বেগম বলেন,আমাদের চোখের সামনে সবার বসতবাড়ি গাছপালা নদীতে চলে যেতে দেখেছি। রক্ষা করতে পারিনি। তারা বলেন,ঘরে খাবার নেই। সামনে যাতে ক্ষতি আর না হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে।
নড়াইল সদরের ভাঙ্গন কবলিত রতডাঙ্গা গ্রামের মোঃ সাহাবুদ্দিন জানান, আমাদের এলাকায় চিত্রা নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে দিয়েছে। এর ফলে নদীর ভাঙ্গন রোধ হয়েছে। আমার বাড়িসহ আশেপাশের বড় এলাকা নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে।
নড়াইল জেলা আইনজীবি সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, নড়াইল জেলার উপর দিয়ে যে সকল নদী বয়ে গেছে বর্ষা মৌসুমে সেগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভাবে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে সে ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন। অনেক সময় নদী ভাঙ্গনের কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও বরাদ্দ না থাকার ব্যবস্থা নিতে পারে না।এ জন্য জরুরি কাজের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো জরিপ করে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী ভাবে বাধ নির্মান করতে হবে।
তিনি বলেন, নড়াইল জেলার অনেক এলাকায় এখনো নদী তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেগুলোতে দ্রæত ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, প্রতি বছরই নদীর স্রোতে নদীর পাড়ে ভাঙ্গন দেয়া দেয়। ভাঙ্গন এর সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রæত সময়ের মধ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করি। আমাদের র্সীমিত সম্পদ ও বাজেটের মধ্য আমরা সব সময়ই সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করি। একই সাথে সাথে কাজের মান নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী টিম সব সময় বিষয়টি মনিটরিং করছে। মানের ক্ষেত্রে আমরা কোন আপোষ করি না।তিনি আরো বলেন, স্থায়ী কাজের জন্য আমরা ভাঙ্গন কবলিত স্থানের স্পেসিফিক ডিজাইন অনুযায়ী বরাদ্দের চাহিদা উদ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।