স্পোর্টস ডেস্ক:
১৩ বছর বয়সেই আইপিএলে দল পেয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন ভারতের বিস্ময়বালক বৈভব সূর্যবংশী। এরপর ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে হৈ-চৈ ফেলে দেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ১৪ বছর বয়সেই তারকা তকমা জুড়ে গেছে তার নামের পাশে। ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে আছেন বৈভব। সেখানেও অনেকটা আলো কেড়ে নিয়েছেন তিনি।
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের ধারাটা ইংল্যান্ডেও অব্যাহত রেখেছেন ১৪ বছর বয়সী বৈভব। এতে ইংল্যান্ডজুড়ে সাড়া ফেলেছেন তিনি। দেশটির রাস্তাঘাটে বের হলেই দিতে হচ্ছে অটোগ্রাফ তাকে। শুধু তাই নয়, বৈভবের সঙ্গে দেখা করতে ও তার খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে গাড়ি চালিয়ে আসছেন কেউ কেউ।
নিজের প্রথম ইংল্যান্ড সফরের যুব ওয়ানডে সিরিজে বৈভব পাঁচ ইনিংসে ৭১ গড়ে করেছেন ৩৫৫ রান, স্ট্রাইক রেট ১৭৪.০১, ছক্কা ২৯টি! সিরিজে রান, স্ট্রাইক রেট ও ছক্কা মারায় কেউ তার ধারেকাছে নেই।
সূর্যবংশীর ২৯ ছক্কাই যুবাদের ওয়ানডে ইতিহাসে এক সিরিজে সর্বোচ্চ। সেই সিরিজেই নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ায় মেতেছিলেন তিনি। ২ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ৩১ বলে ৮৬ রান করার পথে মারেন ৯ ছক্কা, যা ছিল ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোনো ব্যাটারের এক ওয়ানডে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ৫ জুলাই তৃতীয় ওয়ানডেতেই সেই রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। এবার ৭৮ বলে ১৪৩ রান করার পথে মারেন ১০ ছক্কা।
অল্প বয়সেই বিশ্ব ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেওয়া বৈভব আর্থিক দিক থেকেও বেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ১৪ বছর বয়সী এই তারকার মোট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি রুপির বেশি।
এর মধ্যে আইপিএলের মেগা নিলামে রাজস্থান রয়্যালসে বিক্রি হয়ে পেয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখ রুপি। আইপিএলে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করার পর রাজস্থান রয়্যালসের মালিক তাকে ১ কোটি রুপি মূল্যের মার্সিডিজ-বেঞ্জ গাড়ি উপহার দেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী দেন ১০ লাখ রুপি অর্থপুরস্কার।
চলমান ইংল্যান্ড সফরেও সূর্যবংশীর আয় মন্দ নয়। যুবাদের পাঁচ ওয়ানডে খেলে পেয়েছেন ১ লাখ রুপি (ম্যাচপ্রতি ২০ হাজার রুপি করে)। এরপর যুবাদের প্রথম টেস্ট খেলায় অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে আরও ৮০ হাজার রুপি। আগামী ২০ জুলাই চেমসফোর্ডে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ যুব টেস্ট। সেই ম্যাচে ভারতের একাদশে থাকলেই পাবেন আরও ৮০ হাজার রুপি। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড সফর থেকে তার আয় হবে ২ লাখ ৬০ হাজার রুপি।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) বিশ্লেষক এবং পরিসংখ্যানবিদ ড্যানিয়েল পিকক ইংল্যান্ড-ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সিরিজ কাভার করছেন। সূর্যবংশীর খেলা দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ যে, তাকে টেন্ডুলকার-কোহলির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে পিকক বলেছেন, ‘এই সিরিজ চলাকালীন আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, মনে হয় তাদের সবার অনুভূতি এক। আমরা একজন উদীয়মান তারকাকে তৈরি হতে দেখছি, যা সত্যিই বিশেষ ব্যাপার। যেকোনো খেলায় সে-ই সম্ভবত আমার দেখা সেরা ১৪ বছর বয়সী খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটপ্রেমীদের অনুভূতি হলো, তারা একজন বিশেষ তরুণকে ক্রিকেট খেলতে দেখছে এবং তার কাছে প্রত্যাশা টেন্ডুলকার-কোহলির স্তরের, অথবা আরও বেশি।’
বৈভবকে নিয়ে ইংল্যান্ডে কতটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, সেটিও জানিয়েছেন পিকক। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে তাকে নিয়ে হইচই শুরু করেছে। ভক্তরা জানে যে সে কে। যদিও সবাই তার নাম উচ্চারণ করতে পারে না। সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কিছুটা বেশি ছিল। আমরা বিবিসি, দ্য অ্যাথলেটিক, গেটি ইত্যাদির মিডিয়ার কাভারেজ পেয়েছি। অনেক ব্রিটিশ-ভারতীয় প্রথমবারের মতো তার খেলা দেখতে এসেছে।’
দর্শক, সাংবাদিক, ক্রিকেট–বিশ্লেষকেরা তো বটেই, সূর্যবংশীর নির্ভীক ব্যাটিং প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েও মন জয় করেছে। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্পিনার রালফি আলবার্ট বৈভবকে নিয়ে বলেছেন, ‘আমি ওয়ানডে সিরিজজুড়ে ওকে বোলিং করেছি। এরপর টেস্ট সিরিজেও করলাম। ভেবেছিলাম, সে হয়তো একটু দম নেবে। কিন্তু সে (আক্রমণাত্মক ব্যাটিং) চালিয়েই গেছে। সে সত্যিই ভালো খেলোয়াড়।’