হোম রাজনীতি সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির প্রস্তাবে যা বললেন নেতারা

সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির প্রস্তাবে যা বললেন নেতারা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 45 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ৩৩ শতাংশ আসনে সরাসরি মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ প্রস্তাবের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে ১০টি রাজনৈতিক দল। এক পক্ষ মনে করে, এতে নারীদের অধিকার সংকুচিত হতে পারে। আর দেশের বাস্তবতায় ৩৩ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য এখনও হয়নি। অনেকে কমিশনের বিরুদ্ধে সময় ক্ষেপণেরও অভিযোগ আনেন।

অবশ্য প্রধান তিনটি দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা এ বিষয়ে এখনও মন্তব্য করেননি।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের ১৩তম দিনের মধ্যাহ্নে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এমন মনোভাব পোষণ করেন তারা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ৬৫ অনুচ্ছেদে থাকা সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার কথা বলেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। আমরা বরং তা ৫০ থেকে ১০০তে উন্নীত করার কথা বলেছি। তবে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী আসন বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এর জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ এলডিপি

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০ তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত। আমরা মনে করি, সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জরুরি। সংবিধানের ৬৫ ধারা বিলোপ করলে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত হয়ে যায়। আমরা বলেছি, নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন। তবে পদ্ধতি কী হবে সেটা আলোচনা হতে পারে। নতুন নতুন প্রস্তাব আনায় কমিশনের সমালোচনা করেন সেলিম। তিনি অভিযোগ করেন, তারা কখনও উচ্চ পর্যায়ের, আবার কখনও নাগরিক সমাজের কথা বলে নতুন প্রস্তাবনা এনে সময় ক্ষেপণ করছে। তারা চাইলে দুই-একদিনের মধ্যেই সব আলোচনা সম্পন্ন করতে পারে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সঙ্গত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।

আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টারন আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলন

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। আবার ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে— যা এই মুহূর্তে অসম্ভব। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন রেখে ২০ শতাংশ আসনে নারীদের সরাসরি আসনে ভোট হবে। সাকি বলেন, নারীদের পুরোপুরি অধিকার এখনও নিশ্চিত হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীকে রাখা হচ্ছে না। এর অবসান হওয়া জরুরি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই। বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত। এতে তাদের সম্মান আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, নারী এখন অনেকটাই স্বয়ং সম্পূর্ণ। বিগত দিনেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতার বিপক্ষে।

বাসদ (মার্কসবাদী)

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচন করা উচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে। তিনি মনে করেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

জেএসডি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। কেউ কেউ বলেছেন— ৩টি সাধারণ আসনের আওতায় একটি নারী আসনে ভোট হতে পারে। আবার অনেকে ঘুর্ণায়মান পদ্ধতির কথাও বলেছে।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ঐক্য কমিশন একটি বিলম্ব কমিশনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় হাজির করে অযথা সময় ক্ষেপণ করছে। তিনি মনে করেন, বাধ্যবাধকতা করলে নারী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী পাওয়া যাবে না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন