হোম অন্যান্যসারাদেশ যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হত্যাকাণ্ড একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন খুলনার রাব্বির মা

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হত্যাকাণ্ড একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন খুলনার রাব্বির মা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 128 ভিউজ

খুলনা অফিস :
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন খুলনার পারভেজ হাসান রাব্বির (১৬) মা পারভীন বেগম। তিনি ছেলের নাম ধরে বিলাপ করতে করতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। আবার জ্ঞান ফিরলেই ছেলেকে খুঁজে ফিরছেন। এভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন তিনি। অপরদিকে, নিহত রাব্বির বাবাসহ নিকটাত্মীয়রাও শোকে মুহ্যমান। খুলনার দৌলতপুর থানার পশ্চিম সেনপাড়া এলাকায় রাব্বির বাড়িতে দু’দিন ধরেই চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার যশোরের পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাব্বিসহ তিন কিশোরকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

নিহত পারভেজ হাসান রাব্বি নগরীর দৌলতপুর থানাধীন পাশ্চিম সেনপাড়ার বাসিন্দা। সে খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. রোকা মিয়ার একমাত্র পুত্র। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার রাব্বির লাশ নগরীর মানিকতলা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন মসজিদের সামনে জানাজা শেষে মহেশ^রপাশা কবরস্থানে দাফন করা হয়। নগরীর দৌলতপুরস্থ পশ্চিম সেনপাড়া এলাকায় রাব্বিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে মা পারভীন বেগম মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই নির্মমভাবে এমন মৃত্যু পরিবার সহ এলাকাবাসী কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এলাকাবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

রাব্বির পরিবারের সদস্যরা জানান, ‘মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে রাব্বি ফোন করে তার বাবাকে বলেছিল, ‘বাবা আমি আর এখানে থাকতে চাই না, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও’। সন্তানের কথা শুনে বাবা রোকা মিয়া যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ছেলেকে অন্যত্র নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। রোকা মিয়া সন্তানকে শান্তনা দেন- ‘আমি তোমাকে দ্রæত ছাড়িয়ে নিয়ে যাব, একটু অপেক্ষা কর। কিন্তু অপেক্ষার পালা শেষে বাড়ীতে এলো পারভেজ হাসান রাব্বির নিথর দেহ।’ পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বন্ধু মহলের বিরোধে গত বছরের ৩১ আগস্ট একই এলাকার মোস্তফা ফরাজীর পুত্র মো. জনী ফরাজী (১৮) খুন হয়। ওই মামলার তিন আসামির মধ্যে রাব্বিও রয়েছে। কিন্তু সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আদালতের মাধ্যমে তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। গত ৮/৯ মাস ধরেই সে ওই কেন্দ্রে ছিল।

পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া জানান, তার পুত্র রাব্বি মাঝে-মধ্যে ফোনে বলতো ‘ওই কেন্দ্রে ঠিকমত খেতে দেয়না, খাবার চাইলে কারণে অকারণে নির্যাতন করা হয়। দুই সপ্তাহ আগে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খাবার নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা কাটাকটি হয়েছে সেসহ কয়েকজন বন্দির সাথে। সেখানকার কর্মকর্তাদের মদদপুষ্ট কিছু বন্দি একজোট হয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে।’ কিন্তু এখানকার যাদের ফোনে কথা বলি তারা পাশে দাড়িয়ে থাকে, তাই কিছু বললে পরে শাস্তি দিবে। রোকা মিয়া আরও বলেন, আমার ছেলে আমাকে বলেছিল ‘বাবা আমি আর যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকতে চাই না, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’ সর্বশেষ রাব্বি বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করে আমাদেরকে জানায় এখানে ঝামেলা হচ্ছে। তোমরা আমাকে নিয়ে যাও। পরে ওই দিন আমার ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।

রোকা মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলের লাশ আনতে গিয়ে আহত বন্দিসহ অনেকের কাছে নির্মম নির্যাতনের কথা শুনেছি। ২/৩ দিন যাবত না খাওয়া আমার ছেলেসহ কিশোর বন্দিদেরকে প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের মদদপুষ্ট বন্দি মিলে অডিটরিয়ামের সিড়ি ঘরের নিচে নিয়ে গ্রীলের সাথে হ্যান্ডকাপ দিয়ে বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে লোহার রড, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প, পাইপ, কাঠের ও বাশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ী মারপিট করে। মুমুর্ষু অবস্থায় তাদেরকে চিকিৎসা না করে অডিটরিয়ামের মেঝেতে ফেলে রাখে। পরবর্তিতে তাদের হাসপাতালে নেয়, কিন্তু তার আগে আমার ছেলে রাব্বিসহ নাঈম হোসেন ও রাসেল ওরফে সুজন মারা যায়। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা দৌলতপুরের একই এলাকার মো. আলমগীরের পুত্র মো. জনী গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এদিকে, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ঘটনায় নিহত পারভেজ হাসান রাব্বির পিতা রোকা মিয়া বাদী হয়ে রোববার যশোর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় যশোর শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বয়স্ক বন্দীদের আসামি করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন