হোম জাতীয় জব্দ করা অর্থ-সম্পদ দিয়ে ফান্ড গঠন করবে সরকার: গভর্নর

জব্দ করা অর্থ-সম্পদ দিয়ে ফান্ড গঠন করবে সরকার: গভর্নর

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 42 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সাধারণ আমানতকারী ও দরিদ্রদের ক্ষতিপূরণ দিতে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারে অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থ ও সম্পত্তি দিয়ে একটি তহবিল গঠন করা হবে।

সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই তহবিলে অভিযুক্তদের কাছ থেকে জব্দ করা বিভিন্ন ব্যাংক ও কোম্পানির শেয়ারসহ জব্দ করা সম্পত্তিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থ উদ্ধারে আমাদের অগ্রগতি, যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি এবং আইনি বাধা দূর করতে সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি।

গভর্নর বলেন, এই ফান্ড ক্ষতিগ্রস্তদের, বিশেষ করে আর্থিক অনিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের দিতে জনস্বার্থে ব্যবহার করা হবে। তদন্ত বা বিচারাধীন ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত বিপুল পরিমাণ অর্থ আমরা জব্দ করেছি। এ ছাড়া যারা পালিয়ে গেছেন বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, আমরা তাদের শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি।

জব্দ হওয়া সম্পদ কীভাবে প্রস্তাবিত ফান্ডে স্থানান্তর করা যায় এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা। সেখান থেকে আমাদের ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো। ব্যাংকগুলো বিশালভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের থেকেই তো টাকা লুট করা হয়েছে। আর বাকি টাকা যেগুলো নন ব্যাংক সম্পর্কিত, যেমন- হয়তো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হয়েছে, ব্যাংকের টাকা দিয়ে হয়নি, সেই সম্পদ সরকার আরেকটি ফান্ডে নিয়ে জনহিতকর কাজে ব্যয় করবে। কিন্তু সবই আইনগতভাবে করা হবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কেমন সময় লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের তো এমন অভিজ্ঞতা নেই টাকা ফেরত আনার। কিন্তু আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আমরা জানি। সাধারণত এটা ৪-৫ বছর লাগে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে। তবে এর মধ্যে কিছু অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যেমন- বিদেশে তাদের যে সম্পদ আছে সেগুলো ফ্রিজ করা যায়। সেটা কিন্তু আপেক্ষিকভাবে বছরখানেকের মধ্যে করা সম্ভব। আমরা মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি এখন। আমরা অনুরোধ পাঠাচ্ছি, বিদেশিদের সহায়তা যদি আমরা পেয়ে যাই, তাহলে কিন্তু সম্পদ আমরা ফ্রিজ করতে পারবো। সম্পদ ফ্রিজ হলে তারপরে কোর্টে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেই প্রক্রিয়ায় সমাধান হতে সাধারণ ৪-৫ বছর সময় লেগে যায়। তারপর আমরা জানতে পারবো যে, পুরোটা পাবো কী পাবো না।

নগদ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, নগদের পরিচালনা পরিষদ ৬৫০ কোটি টাকার মতো আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা জানি। দ্বিতীয়ত, সরকারের দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচীর জন্য যে অর্থ ট্রান্সফার করা হতো সেখানে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটে ধরা পড়েছে এবং আমরা ইন্টারন্যাশনাল অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করিয়েছিলাম, সেখানেও ধরা পড়েছে। আমরা মনে করি, তাদের হাতেই পুনরায় নগদের কার্যক্রম ফেরত যাওয়া উচিত নয়। যেহেতু কোর্টের একটা রায় হয়েছে, আমরা আপিল করেছি আপিল বিভাগে। শিগগিরই আশা করছি, শুনানির তারিখ দেওয়া হবে। আমরা মনে করি, তখন আমরা আমাদের পক্ষে রায় পাবো। কিন্তু আমরা একটু শঙ্কিত যে, এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তারা অনেক কিছু করে ফেলতে পারে, যেখানে আমাদের হাত থাকবে না। কারণ কোর্টের রায়ের কারণে আমরা একটু অসুবিধাজনক অবস্থায় আছি।

তিনি আশঙ্কা করে বলেন, ক্ষতির কথা বলতে পারে, তারা তাদের অপকর্ম মুছে ফেলতে পারে সিস্টেম থেকে। সেটা করে ফেললে আমাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়বে বিষয়টা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আজকের মিটিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে অভ্যন্তরীণ হিসাবে এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ দশমিক ৭ কোটি টাকা, বৈদেশিক হিসাবে ১৬৪ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার সংযুক্ত করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ যেটা ফ্রিজিং হয়েছে ৪২ হাজার ৬১৪ দশমিক ২৭ কোটি টাকা, বিদেশে ২০ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফ্রিজিং করা হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা লুটের টাকার একটা ম্যানেজেমেন্টের ফান্ড করতে বলেছেন। এই টাকা যিনি ডিপোজিট করবেন এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় হবে। লুটের টাকার পরিমাণ অনেক। এটিকে বাজেটে বা অন্য কোথাও না এনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লুটের টাকার ম্যানেজমেন্ট ফান্ডে ব্যবহার হবে। এই নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টা আজকে দিয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন