হোম অন্যান্যসারাদেশ হাতকাঁটা মান্নান যেভাবে হলেন যুবলীগের আহ্বায়ক

হাতকাঁটা মান্নান যেভাবে হলেন যুবলীগের আহ্বায়ক

কর্তৃক
০ মন্তব্য 132 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধি :
এক সময়কার চোরাচালান ও বিভিন্ন মালামাল ছিনতাইকারী আব্দুল মান্নান। পরে নিজেই শুরু করেন সোনা চোরাচালান। এরপর বিভিন্ন স্থানে জমি দখল, ঘের দখল, বাড়ি দখল, খুন-খারাবি, মারামারি, টেন্ডারবাজি কোনো কিছুতেই পিছিয়ে নেই এই মান্নান। তিনি এখন আলিশান বাড়ি, গাড়ি আর কোটি টাকার মালিক। রয়েছে বিশাল এক বাহিনী। হাতকাঁটা আব্দুল মান্নান নামেও খ্যাতি রয়েছে তার। বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক।

যেভাবে হলেন হাতকাটা মান্নান : ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরার কাশেমপুর গ্রামের মন্তাজ সরদারের ছেলে আবুল হাসান ওরফে ডাক্তার হাসান একটি মামলায় জেলে যান। জেল থেকে জামিনে আসার পর আবদুল মান্নান সেহরি খাবার নাম করে আবুল হাসানকে ডেকে আনেন। এরপর তাঁর দুই হাত কাঠের ওপর রেখে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে কব্জি কেটে নেন। সেই থেকে তাঁর নাম ‘হাতকাটা মান্নান’। দুই কব্জি হারানো হাসান এখন বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করেন। এ ঘটনায় মান্নানের ১০ বছর জেল হয়। কয়েক বছর সাজা খেটে মুক্তি পান তিনি।

যুবলীগে যোগ দেওয়ার পর বেপরোয়া : সাতক্ষীরা সিটি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ২০০৭ সালে আবদুল মান্নান যুবলীগে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে ওঠেন জেলা যুবলীগ নেতা। এরপর তাঁর সন্ত্রাসের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এ সময় সদর উপজেলার আবাদেরহাটের গোপাল ঘোষাল পরিবারের জমি দখল করে নেন তিনি। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর আবদুল মান্নান যুবলীগ থেকে বহিষ্কারও হন। এরপর সাতক্ষীরা সিটি কলেজের পাশে জমি কেনেন আবদুল মান্নান। তাঁর জমির সামনে থাকা একটি জমির ভুয়া মালিক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী দিনমজুর ফয়জুর রহমানের জমি দখল করে নেন। সেখানেই গড়ে তোলেন এক আলিশান বাড়ি। সেই বাড়িতেই বসবাস এখন মান্নানের। তবে এ নিয়ে ফয়জুর রহমান সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে জানিয়েছিলেন। তাছাড়া মামলা করেও জমির দখল নিতে পারেন নি ফয়জুর রহমান।

জমি দখলের পর যুবলীগের সাইনবোর্ড : গেল বছরে ভুয়া মালিক সাজিয়ে সাতক্ষীরা শহরতলীর রসুলপুরে আফরোজা বেগম ও তাঁর স্বজনদের ৩০ শতক ও ৭৬ শতক জমি দখল করে নেন আবদুল মান্নান। এরপর সেখানে যুবলীগের সাইনবোর্ড তুলে দেন তিনি। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আফরোজার পরিবার অভিযোগ করে, আবদুল মান্নান জমির ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি সমাধান করতে তাঁর কাছে যেতে বলেন। তারা গেলে তার (মান্নান) নামে কিছু জমি লিখে দিতে বলেন। এতে অসম্মতি প্রকাশ করায় মান্নান তার সহযোগী সাগর ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দখল করে নেন সেই জমি।

বাস টার্মিনালে হামলা : ২০১১ সালে আবদুল মান্নান হাতে রাম দা নিয়ে সাতক্ষীরা বাসটার্মিনালে হামলা চালিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসীর কাজও করেন বলে জানা যায়। তার এই হামলার কারণে সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতির মালিকানায় পরিবর্তন আসে।

গণপিটুনির শিকার: ২০১২ সালে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েন আবদুল মান্নান। এ সময় গণপিটুনির শিকার হন তিনি। সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

যুবলীগে ফিরে হন আহ্বায়ক : দীর্ঘদিন বহিষ্কৃত থাকার পর দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মান্নান। রাজনৈতিক তদবিরে ফের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর জেলা যুবলীগের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি। এ সময় তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও আজও তা করেননি মান্নান। যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এ সময় তারা কমিটি বাতিল ও মান্নানের বহিষ্কার দাবি করে শহরে মিছিল করেন। এই নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছিল।

ইউপি নির্বাচনেও ঝামেলা : ২০১৬ সালের আগে ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে মান্নানের ভাই আবদুল হান্নান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হন। এ সময় দুই ভাই মান্নান ও হান্নান তাঁদের প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধার সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে আবদুল হান্নান নিজেই মনোনয়ন দাখিলে ব্যর্থ হয়ে একজন নারী মেম্বারকে পাঠান। এরপর দুই ভাই তাঁর কাছ থেকে কাগজপত্র কেড়ে নেন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পুলিশি পাহারায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অন্য এক আবদুল মান্নান তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন। মান্নানের ভাই হান্নানের বিরুদ্ধেও ব্যাংক ডাকাতির মামলা ছিল।

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে হামলাঃ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা চলাকালে আবদুল মান্নান তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালান। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজনসহ আ.লীগের বেশ কিছু সিনিয়র নেতারা মারাত্বক আহত হন। এ ঘটনায় মামলার পর রাতেই আবদুল মান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। আর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবদুল মান্নান আবারও আলোচনায় উঠে আসেন। বর্তমানে তার মন্তব্য পাওয়া না গেলেও এর আগে বিভিন্ন সময়
অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তবে বর্তমানে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাহিরুল হক নান্টা বলেন, আব্দুল মান্নানকে আমরা যুবলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানাই। এর আগে আমরা সংবাদ সম্মেলনসহ মানবন্ধনও করেছি। তার কারণে অতিষ্ট সাতক্ষীরার মানুষ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন