হোম এক্সক্লুসিভ কি যে কন, আমাগো আবার ঈদ!

কি যে কন, আমাগো আবার ঈদ!

কর্তৃক
০ মন্তব্য 99 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

ঠিকমতো খাইবার পারি না। একবার রানলে (রান্না) তিনবার খাই। অনেক সময় না খাইয়া থাহি। ঘরে বুড়া-বুড়ি ও সাত বছরের পোলাডারে না খাওইয়া রাহি। কইলজাডা ফাইডা যায়। সাধে কি আর এইডা করি। ঈদের কতাতো চিন্তাও করবার পারি না।

আমাগো গরিবগো আবার ঈদ আছেনি। ১৫ দিন ধইরা পানির তলে। কেউ খবর লয় নাই। রোজার ঈদ করোনার লেইগ্যা করবার পারি নাই। আর কোরবানির ঈদ করা অইলোনা পানির লেইগ্যা। এভাবেই ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বললেন, রূপগঞ্জের নয়ামাটি এলাকার ঝুনু বেগম। কেবল ঝুনু বেগমের পরিবারই নয়। রূপগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি ২০০০ পরিবারের ঈদ ম্লান হয়ে যাবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রূপগঞ্জ ও রাজধানী নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত এলাকাগুলো ঘুরে পানিবন্দি মানুষের করুণ চিত্র দেখা গেছে। আর দুদিন পর ঈদ হলেও এসব পরিবারগুলোতে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। অনেকের ঘরে রান্না করার চুলা নেই।

অনেকের ঘরের ভেতর পানি। দুই বেলা খাওয়া এখন স্বপ্নের মতো হয়ে গেছে এসব এলাকাবাসীর। ঈদ এসব এলাকাবাসীর কাছে এখন নিরান্দন। বেলা ১১টা। বাবুর জায়গা এলাকার চম্পা বেগম। বয়স ৩৭ কি ৩৮। ঘরে চৌকাঠে বসেই কাপড় পরিষ্কার করছিলেন।

ক্যামেরা তাক করতেই বিষণ্নতা নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়েন, ছবি তুইল্যা কি করবেন। কত কষ্টে আছি কেউ তো খবর লয়না। ছয়জনের সংসার। এই পানির মাঝখানে থাইক্যা কেমনে বাঁচন যায়। দুদিন পরে ঈদ। কি রানমু (রান্না), আর কি খামু? পোলাডায় কানতাছে শার্ট-প্যান্ট কিনা দিতাম, টেকা নাই। করোনায় দিল এক ঈদ শেষ কইরা। আর বন্যায় দিল আরেক ঈদ শেষ কইরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা দেখা গেছে, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নয়ামাটি, দেইলপাড়া, মালিরটেক, পিরুলিয়া, ছনেরটেক, চাঁনখালী, দক্ষিণপাড়া, বসুলিয়া, রাতালদিয়া, রাজধানী ঢাকার ৭৫নং ওয়ার্ডের ইদারকান্দি, দক্ষিণ ফকিরখালী, বালুরপাড়া, বাবুর জায়গা, দাসেরকান্দি, গৌড়নগর, নাসিরাবাদ, শেখের জায়গা এলাকাসহ আরো বেশ কিছু এলাকার ২ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদের কোনো আবেশ নেই। এলাকার মানুষগুলো পানি থেকে রক্ষা পেতে ও খেয়ে-পড়ে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।

দাসেরকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাসুদা বেগম দরজার ফাঁকে অদূরে কি যেন দেখছেন। কাছে কি জানতে চাইলে বলেন, পোলাপানগুইলা ওগো দাদির লগে কোষা দিয়া খাওয়ানের পানি আনতে গেছে। ৪ জন পোলাপান লইয়া গেছে। আল্লায় না করুক যদি কিছু অইয়া যায়। হেউডা দেখতাছিলাম।

তিনি বলেন, আরে ভাই ঈদ কিয়ের। আমাগো আবার ঈদ আছে নাকি। দেহেন ঘরের মাঁচা উঁচা করছি। হেরপরেও পানি। হাপ (সাপ), বিচ্ছুর ভয় নিয়া রাইত কাডাই। আমাগো ঈদ নাই ভাই। খাইয়াই বাঁচি না।

বাবুর জায়গা এলাকার গৃহবধূ শেফালী বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার ঘরের মেঝে সমান পানি। রান্নাঘর তলিয়ে গেছে। থাকার ঘরে চুলা নিয়ে কোনমতে রান্না করে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, অহনইতো ঠিকমতো খাইবার পারি না। ঈদের দিন যদি রানবার পারি তাইলে খামু। আর না পারলে খাইতাম না।

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, নয়ামাটি, দেলপাড়া, মালিরটেকসহ যেসব এলাকার বাড়িঘর পানির নিচে, এদের খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারিভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগীতা করা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে আরো সহযোগীতা আসলে ভালো হতো।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন