সংকল্প ডেস্ক:
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে দেওয়া চেক ডিজঅনারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী হাবিবুল্লাহ হাবিবকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যটালিয়ন (র্যাব )। শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে তাকে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে প্রতারক হাবিবুল্লাহ হাবিব গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত হাবিবুল্লাহ হাবিব সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার পাইকাড়া গ্রামের আহম্মদ আলী কারিকরের ছেলে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের তপন বিশ্বাসের ছেলে তরুন বিশ্বাসকে চাকরি দেওয়ার নাম করে আট লাখ টাকা নেন কালিগঞ্জের পাইকাড়া গ্রামের হাবিবুল্লাহ হাবিব। চাকরি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২২ সালের ২০ জুন তপন বিশ্বাসকে ঢাকার এশিয়ান ব্যাংকের একটি শাখার চেক দেন হাবিব। হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় ওই বছরের ২৪ জুলাই তপন বিশ্বাস প্রতারক হাবিবকে লিগ্যাল নোটিশ দেন। নোটিশ না নেওয়ায় ২৬ জুলাই তা ফেরৎ আসে। একপর্যায়ে তপন বিশ্বাস ৮ সেপ্টেম্বর বাদি হয়ে সাতক্ষীরার আমলী আদালত-৭ এ সিআর-১৯৬/২২ নং মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা পরবর্তীতে বিচারের জন্য সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে(সেশন-১৪৬৮/২৩) স্থানান্তর করা হয়। গত ২০ অক্টোবর বিচারক শাহীদুল ইসলাম আসামী হাবিবুল্লাহ হাবিবকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।
একইভাবে তপন বিশ্বাসের ছেলের চাকরির বাবদ দেবহাটা উপজেলার ধোপাডাঙা গ্রামের নূর মোহাম্মদ সরদারের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেনের মাধ্যমে ২০২২ সালের ২১ মার্চ সাত লাখ টাকা নিয়ে হাবিবুল্লাহ হাবিব ঢাকা এশিয়ান ব্যাংকের একটি চেক দেয় হাবিব। হিসাব নম্বরে টাকা না থ্কাায় লিগাল নোটিশ এর মাধ্যমে ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার সাত নং আমলী আদালতে মামলা(সিআর-১৪৬৭/২২) করেন জাহাঙ্গীর সরদার। মামলাটি পরবর্তীতে সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারের জন্য বদলী হলে গত ১১ জানুয়ারি হাবিবুল্লাহ হাবিবকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন বিচারক শাহীদুল ইসলাম।
দুটি মামলায় সাজা হওয়ার পর হাবিবুল্লাহ হাবিব আত্মগোপন করে ছিলেন। শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে র্যাব সদস্যরা তাকে শহরের পলাশপোল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে কালিগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়।
র্যাব-৬ সাতক্ষীরা ক্যাম্পের এএসপি ফয়সাল আহম্মেদ সাংবাদিকদের কাছে হাবিবুল্লাহ হাবিবকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছন।
প্রসঙ্গত, আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের অন্যতম প্রতারক হাবিবুল্লাহ হাবিব গত একযুগেরও বেশী সময় ধরে সাতক্ষীরা ও যশোর জেলাসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম ছিল। তার নামে কালোবাজারি, দাঙ্গা সংঘটন, সরকারি কাজে বাধা দান, সরকারি কর্মচারীদের ওপর হামলা, অবৈধ বিস্ফোরক সামগ্রী নিজ আয়ত্তে রাখা, অস্ত্র ব্যবসা, জমি দখল, সরকারি চাকরী দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ঢাকায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসাসহ মোট ০৯ টি মামলা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গত ০৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করে এবং ছাত্র সমন্বায়কদের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। সাতক্ষীরা এলাকায় পুনরায় প্রতারণা চক্রের জাল বিছিয়ে নতুন করে এলাকায় প্রতারক চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে র্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। আসামি হাবিবুল্লাহ হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টা সহ অন্যান্য মামলা, ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা, ২০২০ সালে ডিএমপি ঢাকা মোহাম্মদপুর থানায় প্রতারণা মামলা এবং ২০২২ সালে দেবহাটা থানায় উক্ত আসামির নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ছদ্ম নামে একাধিক মামলা আছে মর্মে জানা যায়। প্রতারণা মামলার গ্রেফতারি পরোয়না ভুক্ত ফেরারী আসামি হওয়া স্বত্বেও নিজেকে আত্মগোপনে রেখে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।