কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে এলজিএসপি প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।সরকারী বিধি মালা উপেক্ষা করে নিম্নমানের ইট দিয়ে চলছে কাজ । সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মোট ১৭৫ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের মধ্যে ইটের সোলিংকরন, সোলার লাইট স্থাপন, অফিসের প্রিন্টার, স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, অনলাইন ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট, বিলবোর্ড নির্মান প্রকল্প রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৭৬৭ টাকার ১৫ টি, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে ২২ লাখ ৩ হাজার ৭৫০ টাকার ২১ টি, মজিদপুর ইউনিয়নে ১৮ লাখ ৫০ হাজার ৩১৯ টাকার ১৬ টি, বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৭৪৮ টাকার ১২ টি, মঙ্গলকোট ইউনিয়নে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৫ টাকার ১৭ টি, কেশবপুর ইউনিয়নে ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার ১৫ টি, পাঁজিয়া ইউনিয়নে ১৯ লাখ টাকার ১৪ টি, সুফলাকাটি ইউনিয়নে ১৫ লাখ ১৪ হাজার ২৫৪ টাকার ১৩ টি, গোরৗঘোনা ইউনিয়নে ১৭ লাখ ২০ হাজার ৫৭৯ টাকার ১৮ টি, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৩ টাকার ১৯ টি ও হাসানপুর ইউনিয়নে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৫২৬ টাকা ব্যয়ে ১৫ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়,একাধিক রাস্তার অর্ধেক কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সরকারি কাজে এক নম্বর ইট ব্যবহারের বাধ্য বাধকতা থাকলে ও প্রায় সবকটি ইটের সোলিং প্রকল্পে নিমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। রাস্তায় ব্যবহার করা এবং রাস্তার পাশে রাখা প্রায় সব ইট নিন্মমানের।
এসব ইটের অধিকাংশ গুলোতেই রয়েছে রেইন স্পট (বৃষ্টির দাগ)। রাস্তার মাটি কাটার পর বেডে ৬ ইঞ্চি পরিমাণ বালি দেয়ার কথা থাকলেও ২ থেকে ৩ ইঞ্চির বেশি বালি দেয়া হয়নি।এলজিএসপি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের আগে কোটেশন টেন্ডার আহবান করতে হয়। সর্বনিন্ম দর দাতাকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করার নিয়ম থাকলেও কাগজে কলমে কোটেশন টেন্ডার আহবান ও ঠিকাদার নিয়োগ দেখিয়ে প্রকল্পের শুরুর কার্যস্থলের পাশে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এটা করা হয়েছে শুধু লোক দেখানোর জন্যে। হাসানপুর ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুল জব্বার জানান, তার ওয়ার্ডে এলজিএসপি প্রকল্পের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ইটের সোলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। কোটেশন টেন্ডারের মাধ্যমে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করে চেয়ারম্যান নিজে ইট কিনে দিয়েছেন।
যা দিয়ে আমি নিজে ওই সোলিংয়ের কাজ করেছি।হাসানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক জুলমাত আলি জানান, এলজিএসপির কাজে অনিয়মের সুযোগ খুবই কম। রাস্তার কাজের মান ভাল রাখার জন্য ইট, বালি ও শ্রমিক নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ওয়ার্ডের মেম্বাররা তদারকি করে কাজ শেষ করে। সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন দফাদার জানান, তার ইউনিয়নে এলজিএসপি প্রকল্পের ১৩ টি রাস্তার ইটের সোলিংকাজ রয়েছে। কোটেশনের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার নির্বাচিত করে কাজ করার নিয়ম থাকলেও মেম্বাররা একজন ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে সকল কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমান জানান, এলজিএসপি প্রকল্পের উন্নয়নকাজ ইউনিয়ন পরিষদ করে থাকে।তবে চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর থেকে প্রাক্কলন তৈরী করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, এলজিএসপি প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এলজিএসপি প্রকল্প-৩ এর জেলা ফ্যাসিলিটেটর আব্দুল হালিম বলেন, এলজিএসপির কাজের তদারকির জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া আছে। তাদের তত্ত¡াবধানে এ কাজ সম্পন্ন হয়। কোন ইউনিয়নের কাজে অনিয়ম পেলে তদন্ত করে বিল আটকে দেয়া হবে।