আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নবনির্বাচিত ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন টেসলা মালিকের জন্যও কিছু সুফল বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া মাস্কের জন্য সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
জয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকার সময়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মাস্ক লিখেছেন, মার্কিন জনগণ পরিবর্তন চায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচিত করে সেই সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট তারা দিয়েছেন।
নির্বাচনে জয়লাভের পর পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে বক্তৃতা দেন ট্রাম্প। ভাষণ দানকালে মাস্কের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন তিনি।
গত জুলাইতে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পরই তার প্রতি নিজের সমর্থন প্রকাশ করেন মাস্ক। এরপর থেকে প্রচারণার জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জনসভায় সরাসরি উপস্থিত ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আমেরিকা পিএসি নামক প্রতিষ্ঠান। সরকারি হিসাব মতে, এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছেন তিনি। এছাড়া, সুইং স্টেটগুলোতে ভোটার টানতে লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার দেওয়ার মতো বিতর্কিত পদক্ষেপ নেন ইলন মাস্ক।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সরকারি খাতের অপব্যয় কমানোর জন্য মাস্ককে নিজের প্রশাসনে আমন্ত্রণ জানাবেন। এই সম্ভাব্য দায়িত্বকে মার্কিন ধনকুবের ‘সরকারি সক্ষমতা অধিদফতর’ (ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি) বলে অভিহিত করেছেন।
মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ-টেসলা বৈদ্যুতিক যান থেকে শুরু করে স্পেসএক্স রকেট ও নিউরালিংক ব্রেন চিপ সরকারি নিয়মকানুন, ভর্তুকি সুবিধা বা নীতির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
স্পেসএক্সের শীর্ষস্থানীয় একজন সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যমান সব নিয়মকানুনকে ব্যবসা ও উদ্ভাবনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখে থাকেন মাস্ক। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার প্রশাসনকে মাস্ক ওই সব নিয়মকানুন বা বিধিনিষেধ কাটানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন, যাতে যা ইচ্ছা তিনি তা করতে পারেন।
ট্রাম্পের মেয়াদের নিজের প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স নিয়েও বেশকিছু সুবিধা পেতে পারেন ইলন মাস্ক। মহাকাশে সরকারি স্যাটেলাইট পাঠানোর অন্যতম দাপুটে প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স। ভবিষ্যতে পেন্টাগনের জন্য স্পাই স্যাটেলাইট নির্মাণ ও প্রেরণের চুক্তিও পেতে পারেন মাস্ক।
এছাড়া, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টেসলার জন্য প্রশাসনিক আনুকূল্য আশা করতে পারেন মাস্ক। কেননা, অন্যান্য প্রেসিডেন্টের মতো একগাদা বিধিনিষেধের জালে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে জড়াবেন না বলে কথা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ গত মাসে জানিয়েছিল, টেসলার নিরাপত্তা বিষয়ক খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখছে তারা।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধনীদের কর মওকুফের অঙ্গীকারও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার কথা রাখলে অখুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই মাস্কের।
সবমিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে হয়ত পরোক্ষভাবে জিতে গেলেন ইলন মাস্ক নিজেও।