আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অতিশি মারলেনা! নিজের নামের পাশে ‘মারলেনা’ কেন যুক্ত করেছেন? কারণ- জার্মান দার্শনিক মার্ক্স এবং রুশদের বলশেভিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়া ভ্লাদেমির লেনিন-এর অন্যতম ভক্ত তিনি। তাদের মতাদর্শ ও চিন্তাধারা নিজের মধ্যে লালন করেন অতিশি। দুই গুরুকে এতোটাই ভালবাসেন যে নিজের নাম রেখেছেন দুই গুরুর নামের অংশ দিয়ে। যেমন: মার্ক্স থেকে মার এবং লেনিন থেকে লেনা। মিলে হয়েছে ‘মারলেনা’।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পদত্যাগের পর, আম আদমি পার্টি’র বৈঠকে দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন এই অতিশি মারলেনা। খুব সাধারণ পরিবার থেকে আসা কে এই অতিশি মারলেনা? চলুন দেখে নেয়া যাক:
শিক্ষাজীবন:
৪ জুন, ১৯৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন অতিশি মারলেনা। দিল্লির একটি একাডেমিক পরিবার থেকে এসেছেন তিনি। কারণ- তার বাবা বিজয় সিং ও মা ত্রিপ্তা ওয়াহি দু’জনই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
তার শিক্ষাগত যাত্রা শুরু হয় হোমটাউন দিল্লিতে-ই। যেখানে পুসা রোডের স্প্রিংডেলস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর ২০০১ সালে, সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
তারপর ২০০৩ সালে, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চেভেনিং স্কলারশিপ নিয়ে ইতিহাসে মাস্টার্স শেষ করেন। ২০০৫ সালে, রোডস স্কলার হিসেবে ম্যাগডালেন কলেজে তার সময় কাটে।
অতিশির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে, যখন তিনি আম আদমি পার্টিতে (এএপি) যোগ দেন। সেই সময়ে, পরিবর্তিত নীতি প্রণয়নে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। বিশেষ করে, ভারতে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে বেশ কিছু নীতি প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৫ সালে, মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়া জেলায় জল সত্যাগ্রহের সময় তার সক্রিয়তা প্রধান্য লাভ করে, যেখানে তিনি প্রতিবাদ এবং পরবর্তী আইনি প্রণয়নের জন্য আম আদমি পার্টি’র নেতা অলোক আগরওয়াল-কে সমর্থন করেছিলেন।
এরপর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নেতৃত্বে, অতিশিকে পূর্ব দিল্লির জন্য দলের ইনচার্জ নিযুক্ত করা হয়েছিলো। তবে সেবার বিজেপির গৌতম গম্ভীরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয় স্থানে এসেছিলেন। তখন ভোটের ব্যবধান ছিলো ৪ দশমিক ৭৭ লাখ।
দিল্লির রাজনীতিতে উত্থান:
২০২০ সালে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন তার রাজনৈতিক যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এনে দেয়। দক্ষিণ দিল্লির কালকাজি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অতিশি ১১ হাজার ৪২২ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী ধরমবীর সিংয়ের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। এই জয় তাকে দিল্লি সরকারের মধ্যে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করেছিলো। তখন থেকেই দিল্লির প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উঠে আসে তার নাম।
মন্ত্রিসভায় নিয়োগ এবং আইনী ভূমিকা:
নির্বাচনী সাফল্যের পর, অতিশিকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসাবে দিল্লি সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০২০ সালে, প্রথমবারের মতো কালকাজি নির্বাচনী এলাকা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন অতিশি। আবগারি নীতির মামলায় তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিনি মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
২০২২-২৩ সময়কালে, তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সাথে নারী ও শিশু কল্যাণ, সংখ্যালঘু কল্যাণ এবং শিক্ষারসহ আরও কয়েকটি কমিটির সাথে জড়িত ছিলেন অতিশি।
অতিশি কেজরিওয়ালের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ, রাজস্ব, পরিকল্পনা, অর্থ, পরিষেবা, ভিজিলেন্স, পানি ও জনসংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরসহ সর্বাধিক পোর্টফোলিও সামলেছেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে প্রথম প্রেস কনফারেন্সে এসে অতিশি মারলেনা বলেছেন, ‘আমি সর্বপ্রথম ধন্যবাদ জানাতে চাই দিল্লির জনগণের প্রিয়ও মুখ্যমন্ত্রী, আম আদমি পার্টি’র নেতা ও আমার গুরু অরবিন্দ কেজরিওয়াল-কে। কারণ- তিনি এতোবড় দায়িত্ব দেয়ার জন্য আমার ওপর ভরসা করেছেন। এটা শুধুমাত্র গুরু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে হতে পারে যে আমার মতো ‘ফার্স্ট টিইম’ পলিটিশিয়ানকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ দিয়েছেন। কারণ- আমি খুব সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। যদি অন্য কোন পার্টিতে থাকতাম, হয়তো নির্বাচনে লড়ার টিকেট-ও পেতাম না।’