শ্যামনগর প্রতিনিধি:
সুপার সাইক্লোন আম্ফান প্রভাবিত খুলনা জেলার কয়রার উত্তর বেদকাশীতে লোকালয়ে চলছে তীব্র জোয়ার ভাটা,আটকানো সম্ভব হয়নি কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি।কয়রার সদর ইউনিয়নে ঘাটাখালি,২ নং কয়রা ও মহারাজপুর ইউনিয়নে দশাহালিয়া এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৬নং উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে কাশীর হাটখোলা ও কাটমার চর।আম্ফান প্রভাবিত সকল এলাকার ক্ষতিগ্রস্হ বেড়ীবাঁধ পাইলিং করে নির্মাণ ও মেরামত করা হলেও কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাশীর হাটখোলা,কাটমারচরের ক্ষতিগ্রস্হ বেড়ীবাঁধ এখনো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি ও লোনা পানি আটাকানো সম্ভব হয়নি।ফলে এখনে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাশীর হাটখোলা,কাছারীবাড়ি,দীঘির পাড়,গাজীপাড়া,কাটমারচর এলাকায় এখনো কপোতাক্ষ নদের লোনা পানির তীব্র জোয়ার ভাটা চলছে।ফলে দেখা দিয়েছে জনজীবনে দূর্বিষহ ও ব্যাপক দূর্ভোগ।জন সাধারণে দেখা দিয়েছে তীব্র পানীয় সংকট,খাদ্য সংকটসহ বাসস্হান,চিকিৎসা ও স্যানিটেশন অসুবিধা।তীব্র জোয়ার ভাটায় বসত ঘর-বাড়ি,দোকান,ক্লাব ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে।ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে সবজি ক্ষেত ও ফসলী ধানের জমি।ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে হাজার হাজার বিঘার মতস্য ও বাগদা চিংড়ীর ঘের এবং কোটি কোটি টাকার মতস্য সম্পদ।অনাহারে,খাদ্যাভাবে পানীয় জলের সংকটে,স্যানিটেশন অসুবিধা,বাসস্হানের অভাবে ক্ষতিগ্রস্হ অসহায় পরিবারগুলো আম্ফানে করোনার ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু ওয়াপদা রাস্তার উপর,সাইক্লোন শেল্টারসহ অন্যান্য নিরাপদ জায়গায়।স্বেচ্ছাশ্রমে এসব এলাকার বেড়ীবাঁধগুলো পাইলিং করে মেরামত হলেও এখনো টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি আম্ফান প্রভাবিত উপকূলীয় এলাকাগুলোতে।এসব এলাকায় সুপেয় পানির একমাত্র উতস হল বেশ কয়েকটি পুকুর,দীঘি ও নিরাপদ টিউবওয়েল।অল্প সংখ্যক টিউবওয়েল,দীঘিএবং পুকুরগুলো লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট।তাছাড়া এখন বৃষ্টির মৌসুম হলেও সুপেয় পানি হিসেবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যাবস্হা নেই।ক্ষতিগ্রস্হ পরিবারগুলোতে ৫০০/১০০০ লিটার পানির ট্যাংক বিতরণ করলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের চাহিদা মিটবে।আম্ফান প্রভাবিত শ্যামনগর উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকার পাশাপাশি কয়রাতে বাংলাদেশ সরকার,স্থানীয় প্রশাসন ও বেশ কিছু দেশী-বিদেশী সহায়তাপ্রাপ্ত এনজিও/সংস্হা’র মহতী উদ্দ্যোগ ও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।আম্ফান প্রভাবিত কয়রার ক্ষতিগ্রস্হ ইউনিয়নগুলোতে সুপেয় পানি বিতরণ,টিউবওয়েল নির্মান ও পানির ট্যাংক বিতরণ,জরুরী ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা,আর্থিক সহায়তা,নিরাপদ হাইজিন,স্বাস্হ্য-চিকিৎসা ব্যাবস্হা,স্যানিটেশন নির্মাণ,বাসঘৃহ নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্প,কৃষি জমি ও কাঁকড়া চাষ ও চিংড়ী ঘেরে জরুরী সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয়া জরুরী।বর্তমানে জনসাধারণের পাশাপাশি কয়রার ক্ষতিগ্রস্হ ইউনিয়নের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে বেকার,কর্মহীন ও নানাবিধ অসুবিধার মধ্যে রয়েছে।এজন্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য আর্থিক ও অন্যান সুবিধাসহ জরুরী “আম্ফান বৃত্তি” ও কর্মসংস্থানের ব্যাবস্হা গ্রহন করা উচিত।সফল রাষ্টনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখহাসিনা সারাদেশে বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে সচেতন ও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন।আম্ফান প্রভাবিত ও বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষনিক নিজেই সকল পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিচ্ছেন।কয়রা উপজেলার আম্ফান ক্ষতিগ্রস্হ স্থানীয়রা জানান, “দ্রুত টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে হাজারো বছরের এসব জনপদ”, “পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্হানীয় জন প্রতিনিধিরা আরো বেশী উদ্দ্যোগী ও সচেতন হলে এসব বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলোনা,অনেক আগেই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করে লোনা পানি আটকানো সম্ভব হত”।সাধারণ জনগন পানিসংকট,খাদ্য সংকট মোকাবেলাসহ উপরিল্লিখিত বিভিন্ন সমস্যা ও অসুবিধার কথা জানিয়ে দ্রুত এসব ক্ষতিগ্রস্হ টেকসই নতুন বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করার জন্য আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।