বাণিজ্য ডেস্ক:
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাম বাড়ানো হলেও লোডশেডিং হ্রাস পায়নি। দিনের অনেকটা সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বাইরে থেকে গ্যাস এনে কারখানা চালাতে হওয়ায় ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে দেশে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডায়ালগ অন পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর ইন দি ন্যাশনাল বাজেট ২০২৫: চ্যালেন্জস অ্যান্ড প্রপোজড মেজারস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
একে আজাদ বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে দেশে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না আসায় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমে গেছে। ফলে এনবিআর বাজেটে তার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হবে। দেশের কর্মশক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ বেকার। এই বেকারত্ব দূর করতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কথা বলে দাম বাড়ানো হলো। কিন্তু লোডশেডিং কমেনি। ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ডিজেল দিয়ে, সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস এনে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হচ্ছে।
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দ ৩০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান সরকার আদৌ করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন রেখে এ কে আজাদ বলেন, বর্তমানে দেশের ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালে যখন দেশের অভ্যন্তরীণ সব গ্যাস ফুরিয়ে যাবে, তখন দেশ সম্পূর্ণভাবে জ্বালানি আমদানি নির্ভর হবে। তখন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের টাকা কোথায় থেকে আসবে সে ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত হতে চাইবেন।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে। তারা যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তবে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, আর যদি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তবে দেশে সুদের হার বেড়ে যাবে, এতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। এখনই সুদের হার ১৪ শতাংশে উঠে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিশেষ করে ভারতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে উল্লেখ করে এ কে আজাদ বলেন, সেখানে কয়েকটি রাজ্যে জমি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ভর্তুকি দেয় সে দেশের সরকার। বিনিয়োগ তো তাহলে সেখানেই হবে।
এ কে আজাদ বলেন, বিবিএস এর তথ্যমতে দেশে এক কোটিরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের বাইরে। যাদের অধিকাংশই তরুণ। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা দেশের উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, ভোক্তা অধিকার সংগঠনের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম প্রমুখ।