জাতীয় ডেস্ক:
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
বুধবার (১২ জুন) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘মূল ঘাতক শিমুল ভূঁইয়াসহ তিনজনের দেয়া জবানবন্দিতে নাম এসেছে ‘গ্যাস বাবুর’। গ্যাস বাবুকের গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যে নাম আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর।’
‘তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণের জন্যই তাকে ডাকা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর দিতে পারলে মিন্টুকে ছেড়ে দেয়া হবে। আর না পারলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে,’ বললেন হারুন।
সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরও অনেকের তথ্য প্রমাণ রয়েছে। যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিবির এই কর্মকর্তা।
মামলা তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশ সবসময় স্বাধীনভাবে মামলা তদন্ত করে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো চাপ থাকে না।’
এর আগে সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে সাইদুল করিম মিন্টুকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, আনার হত্যাকাণ্ডের প্রধান হোতা আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে মিন্টুর যোগাযোগ ছিল।
এর আগে আনার হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে ‘গ্যাস বাবু’কে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ৮ জুন আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সোমবার (১০ জুন) সচিবালয়ে নিজ দফতরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানান, আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ হলে অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন। সেইসঙ্গে আনারের মরদেহ শনাক্ত হলে অনেক কিছুই প্রকাশ করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের।
২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সাঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
২৮ মে সন্ধ্যায় সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এগুলো আনারের মরদেহের খণ্ডাংশ কি না সেটা এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
সংসদ সদস্য আনারকন্যা ডরিনের করা হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে দুদফা রিমান্ডে নেয়া হয়। আর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বারাসাতের আদালত।
এছাড়া বর্তমানে কলকাতা পুলিশের হেফাজতে থাকা সিয়ামের বিরুদ্ধে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আমানের সহযোগী সাইফুল মেম্বারকেও রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।