হোম খেলাধুলা ইসলামের শিক্ষাই হল ক্ষমা, জঙ্গি ডাক শোনার পর বলেছিলেন আমলা

ইসলামের শিক্ষাই হল ক্ষমা, জঙ্গি ডাক শোনার পর বলেছিলেন আমলা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 123 ভিউজ

স্পোর্টস ডেস্ক:

‘জঙ্গিটা (টেররিস্ট) আরেকটা ক্যাচ ধরেছে।’ ২০০৬ সালে কলম্বো টেস্টে হাশিম আমলা সনাৎ জয়াসুরিয়ার ক্যাচ ধরার পর ধারাভাষ্যকার কক্ষ থেকে বলেছিলেন সনি টেনের ডিন জোনস। অস্ট্রেলিয়ান ধারাভাষ্যকার কথাটা বলেছিলেন টিভি বিরতিতে গিয়েছিল ভেবে, কিন্তু ততক্ষণে সোরগোল ক্রিকেটপাড়ায়; সবাই শুনে ফেলেন সে কথা। পরে প্রোটিয়া ক্রিকেটারের কাছে ফোন দিয়ে ক্ষমা চান জোনস। উত্তরে আমলা বলেন, ‘সমস্যা নেই।’ এতটাই ক্ষমাশীল ছিলেন তিনি!

ডিন জোনস সরি বলতেই ক্ষমা করে দেয়ার ব্যাখ্যায় দ্য গার্ডিয়ানকে আমলা বলেন, ‌‘‘আমার মনে আছে, ডিন জোনস ফোন দিয়ে ক্ষমা চাইছেন। বলেন, ‘দুঃখিত। আমি ভাবিনি কথাটা সম্প্রচার হয়ে যাবে।’ ইসলামের শিক্ষাটা হলো কেউ মাফ চাইলে মাফ করে দেয়া। আমাদের সবার অন্দরমহলে কিছু কুসংস্কার আছে; সেটা গায়ের রঙ নিয়ে হতে পারে, হতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বীতা কিংবা ধর্ম নিয়ে।’

২০১৯ সালে আমলা অবসর নিলে তাকে নিয়ে একটা কলাম লিখেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক টিম অ্যানালিস্ট প্রসন্ন অগুরাম। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এই ভারতীয় লেখেন, ‘কোথা থেকে শুরু করব বুঝছি না। পৃথিবী তাকে মহৎ ব্যাটার হিসেবে জানে। তা তো অবশ্যই। কিন্তু আমার স্মৃতিতে সে দারুণ একজন মানুষও। অনেক স্মৃতি আছে, সেগুলো বললে যে কোনো মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে। একদিন তার (আমলার) বাড়িতে ডিনার করছিলাম। ভাবছিলাম প্লেটটা কোথায় রাখব। সে হুট করে সেটা নিয়ে ডাস্টবিনে রেখে দিল। আমি থ হয়ে গেলাম। বলল, আরে ভাই। আমার বাড়িতে এসেছেন। আপনি মেহমান আমাকে সেবা করতে দেন। আরেক দিন কিছু খাবার শেষ করতে পারছিলাম না। প্লেট নিয়ে উঠার সময় সে বলল, ভাই খাবার নষ্ট করতে নেই। এরপর নিজের প্লেটে সব নিয়ে নিল। আমি নিজে নিজে উপলব্ধি করলাম, ভালো হওয়ার জন্য আমাকে আরও কত কী করতে হবে। আমি কোচ হলেও ওই ক্ষেত্রে সে আমার গুরু।’

জীবনকে এভাবেই দেখতেন আমলা। সাদাসিধে এই মানুষটা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে, ডারবানে। তার বাবা ভারতীয়, মা দক্ষিণ আফ্রিকান। আমলার এক ভাইও আছেন, নাম আহমেদ আমলা। তিনিও ছিলেন পেশাদার ক্রিকেটার, গায়ে জাতীয় দলের জার্সি না উঠলেও আহমেদ খেলেছেন ১২৮টি ফার্স্ট ক্লাস ও ১২৭টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ।

২০০৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় আমলার। ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেক ম্যাচটিতে উপস্থিত ছিলেন তার ভারতীয় বাবা মাহমেদ এইচ আমলা। ওই ম্যাচে মাত্র ২৬ রান করেন হাশিম। মাসখানেক পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৩৬ রান করার পর সমালোচনা তৈরি হয় তার কৌশল নিয়ে। আমলা বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। পরে ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনে খেলেন ১৪৯ রানের ইনিংস।

টেস্টে আমলার টানা ১৩ ঘণ্টা ব্যাট করার রেকর্ড আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৩১১ রান করেছিলেন তিনি, যা প্রোটিয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার আর কেউই টেস্টে ৩০০’র ঘরে পৌঁছতে পারেননি। আমলার চেয়ে বেশি সময় ব্যাট করার নজির আছে আর মাত্র ৫ জন ক্রিকেটারের। দেশের জার্সিতে ১২৪ টেস্টে এই ব্যাটার করেছেন ৯ হাজার ২৮২ রান, প্রোটিয়াদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

আমলার ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০৮ সালে। এই ফরম্যাটে একাধিক রেকর্ড নিজের নামে লিখেছেন তিনি। দ্রুততম ৩ হাজার, ৪ হাজার, ৬ হাজার ও ৭ হাজার ওয়ানডে রান করেছেন তিনি। দ্রুততম ৫ ও ৮ হাজার রান করার দৌড়ে আমলা দ্বিতীয় স্থানে। ১৮১ ওয়ানডেতে তিনি করেছেন ৮ হাজার ১১৩ রান। ৪৪ টি-টোয়েন্টিতে করেছেন এক হাজার ২৭৭ রান।

তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আমলার নামের পাশে ৫৫টি (টেস্টে ২৮, ওয়ানডেতে ২৭) সেঞ্চুরি। তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে আর মাত্র ৫ জনের। ১০০ সেঞ্চুরি নিয়ে এই তালিকায় সবার উপরে শচীন টেন্ডুলকার।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন